এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির চালক যে তথ্য দিলেন (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় একের পর ক্লু বেরিয়ে আসছে। এবার এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির চালকের দেওয়া তথ্যে মরদেহের অংশবিশেষ এক্সেস মলের নজরুল তীর্থের আশেপাশে ফেলা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

Advertisement

ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মাননীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের বিচার চাই । 

কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি চালকের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সিআইডি।

 

ভারত পুলিশের এ সংস্থাটি জানায়, বুধবার এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত WB18 AA 5473 নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করে সিআইডি। এই গাড়িটি গত ৩০ এপ্রিল অনলাইন রেন্টালের মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিল খুনিরা। গত ১৩ মে আনারকে হত্যা করে তার শরীরের কিছু অংশ ১৪ মে ওই ভাড়া গাড়িতে করে কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে বের করে খুনিরা।

 

সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির চালক জানিয়েছে, গত ১৪ মে এক মহিলা ও দুই ব্যক্তিকে সুটকেসসহ এক্সেস মলের সামনে নামায়।

Advertisement

সিআইডি সিসিভিটি ফুটেজ দেখে জানতে পেরেছে এক্সেস মলে নামানোর আগে নজরুল তীর্থের কাছে গাড়িটি ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় দেহাংশ কোথায় ফেলা হবে সেই নিয়েই মিটিং হয় গাড়ির মধ্যে। এরপর তাদের এক্সেস মলের সামনে নামিয়ে দেয় চালক। ফলে সিআইডি মনে করে চালক অনেক কিছুই জানে যা সে বলছে না। তদন্তের স্বার্থে ওই চালককে আটক করেছে পুলিশ।

 

এদিকে, আজ ভারতীয় পুলিশের এই বিশেষ টিমের ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি সূত্র।

Advertisement

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। এসব তথ্য দুই দেশের পুলিশের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশের একটি স্পেশাল টিম তদন্তের জন্য আজ ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তবে কত সদস্যের দল ঢাকায় আসবে তা এখনো জানা যায়নি।

 

এর আগে, বুধবার (২২ মে) সকালে গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম খবর ছড়ায়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার শিকার হয়েছেন।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে নিউটাউনের ওই ফ্লাটে আনারকে খুন করে লাশ টুকরো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় নেওয়া হয় ১০ মিনিটেরও কম। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন। এরপর ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটের ফ্রিজে ও প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে মরদেহের কিছু টুকরো। প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত WB18 AA 5473 নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গাড়িটিকে শনাক্ত করার পর মালিকসহ সেটি নিউটাউন থানায় আনা হয়। গাড়িটি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

Advertisement

 

এদিকে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে। আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে আমানকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

 

জানা যায়, কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজীমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এরপর তাকে জিম্মি করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে। মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরোগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দেখা করেন। তবে শাহীন পরবর্তীতে আমানকে কত টাকা দিয়েছেন সেটা জানা যায়নি।

 

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন- হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

 

গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার মলপাড়া লেনের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসককে দেখানোর উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায়় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। উল্টো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, তাকে আর ফোন করতে হবে না। দরকার হলে তিনি তাকে (গোপাল বিশ্বাস) ফোন করবেন। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনোভাবেই তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে উৎকণ্ঠা ছড়ায় তার বাংলাদেশের বাসায়। পাশাপাশি গোপাল বিশ্বাসও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপরই কোনও উপায় না দেখে গত ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস।

 

জিডিতে গোপাল বিশ্বাস লিখেছেন, গত ১৩ মে দুপুর দেড়টার পর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। যাওয়ার সময় বলে যান, দুপুরে খাবো না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো। যাওয়ার সময় নিজে গাড়ি ডেকে বরাহনগর বিধান পার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর তিনি সন্ধ্যায় বরাহনগর থানার অন্তর্গত মণ্ডলপাড়া লেনে বাড়িতে না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেন, আমি বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। গিয়ে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।

Advertisement

গোপাল বিশ্বাস মিসিং ডায়েরিতে আরও লিখেছেন, গত ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছে, ফোন করার দরকার নেই।

 

এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়েছে।

 

বুধবার (২২ মে) অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেন এমপি আনারের মেয়ে মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন। তবে এতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আহাদ আলী।