ঢাকা: সাধারণ ব্যাংকিং খাতের বাইরের জনগোষ্ঠীকে পোস্ট অফিসের অধীনে পরিচালিত ‘ই-কমার্স’ ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে ‘পোস্ট অফিস ব্যাংক’ চালু করতে চান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
পোস্ট অফিসের ই-কমার্স ব্যাংকিং বিস্তৃত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে চান প্রতিমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর জেনারেল পোস্ট অফিসে (জিপিও) এক সভা শেষে বাংলানিউজকে একথা জানান।
এসময় তারানা হালিম বলেন, পোস্টাল বিভাগ অবহেলিত না, পোস্ট অফিস ঘুরে দাঁড়াবে, দাঁড়াতেই হবে।
‘কোন বিভাগের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করতে চাই না। ডাক বিভাগ, টেসিস, টেলিটক, বিটিসিএলে মাসে একদিন করে অফিস করবো। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেক সংস্থার প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা আছে, কাজগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, আমার সহযোগিতা পাবার অধিকার সবার আছে। আলাদাভাবে অফিস করলে কর্ম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, সমস্যা সমাধান চাইতে পারেন এবং প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর জন্য আমার যে আগ্রহ আছে সেটা প্রকাশ পায়।’
পোস্ট অফিস ব্যাংকিং
ডাক বিভাগের ই-কমার্সের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রমে ফিক্স ডিপোজিটে অন্য ব্যাংকের থেকে সুদ বেশি এবং যখন ইচ্ছা তখন গ্রাহক টাকা তুলতে পারেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তারানা হালিম বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের বাইরে যে জনগোষ্ঠী আছে তাদেরকে পোস্ট অফিসের ই-কমার্সে নিয়ে আসতে চাই। প্রত্যন্ত এলাকাসহ আমাদের ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর হয়ে গেছে। অন্য কোনো প্রাইভেট সেক্টরে এটা কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
ই-কমার্স কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার পরিকল্পার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২৬ জুন মিটিংয়ে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো পোস্ট অফিসের ব্যাংকিংটা যেন অনুমোদন দেওয়া হয়।
‘যার মাধ্যমে ব্যাংকের মত কার্যক্রম করতে পারবো। আমাদের যে এফডিআর আছে সেগুলো দিয়ে যেন মাইক্রো ক্রেডিট শুরু করতে পারি। পোস্ট অফিস থেকে মাইক্রো ক্রেডিট শুরু করলে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। অন্য ব্যাংকের থেকে এখানে সুদ বেশি। এখানে মানুষ সঞ্চয় হিসাব খুলতে চায়। পল্লী ব্যাংকের আদলে কাজ শুরু করতে চাই। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।’
কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা একটু সময় সাপেক্ষ, কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ডাকঘর এ সেবা দেয়া শুরু করলে মানুষ এখানে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারবে, টাকা তুলতে পারবে, জমা দিতে পারবে। তার জন্য সহজ হয়ে যাবে কারণ দরজার কাছেই এ সেবা পাবে। সেবাটাকে বিস্তৃত করার জন্য অনুমোদন নিতে হবে।
চালু হচ্ছে ১১৮টি গাড়ি, ২০ শতাংশ নারী চালক
তারানা হালিম বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে ডাক বিভাগের ১১৮টি গাড়ি চলন্ত অবস্থায় দেখতে চাই। গাড়িগুলো পার্সেল এবং কুরিয়ার সার্ভিসের কাজে ব্যবহার হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গাড়িগুলো অনুমোদন দিলেও দেরিতে অর্থ ছাড় হওয়ায় একটু দেরি হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
যানবাহনগুলোতে ২০ শতাংশ নারী ড্রাইভার নেওয়া হবে বলে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, আমি সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করি, অদক্ষ চালকের হাতে স্টিয়ারিং দিতে রাজি না, কাজে দক্ষ চালক হতে হবে।
আন্তর্জাতিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারী চালকরা সর্তকর্তার সঙ্গে কম গতিতে গাড়ি চালায়, ওভার টেকিং করে না। নারীরা ঠাণ্ডা মাথার চালক হিসেবে পরিচিত।
প্রচারের মাত্র ২ লাখ টাকা!
ডাক বিভাগের কার্যক্রম প্রচারের জন্য বার্ষিক মাত্র দুই লাখ টাকা বরাদ্দ থাকা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেন তারানা হালিম।
তিনি বলেন, এ দুই লাখ টাকা দিয়ে কী হয়? কিভাবে বিজ্ঞাপন দেবে, কীভাবে কী করবে আমার বোধগম্য নয়। আমরা কী কী সার্ভিস দেই, সেটা তো মানুষকে জানাতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী এবং জিপিও কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।