ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি), বরিশাল প্রতিনিধি, শনিবার ০৪ মে ২০২৪ || বৈশাখ ২১ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ :জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পঞ্চাশ বছর পর দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে পানির নিচে। এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আর এ কারণে পরিত্যক্ত কচুরিপানা ও বাঁশ দিয়ে মাচা বানিয়ে জলাশয়ের মধ্যে সবজি ও ফল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
Advertisement
গবেষকরা বলছেন, জলাশয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে ভবিষ্যতের যে কোনো সংকট মোকাবিলা করতে পারবে কৃষকরা। আর এমন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরাও।
মধ্য জলাশয়ে চারদিকে থৈ থৈ পানি। জলের ওপরে মাচায় ঝুলছে লাউ, তরমুজ, বটবটিসহ নানা সবজি।
জলাশয়ে ওপর কচুরিপানা ও বাঁশের সমন্বয়ে মাচা বানিয়ে গত ৭ বছর ধরে বরিশালসহ দেশের ৭১ টি উপজেলায় চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে জলাশয়ে চাষাবাদে।
Advertisement
কৃষকরা জানান, মাত্র ২ থেকে ২৫শ’ টাকা খরচ করে কচুরিপানা ও বাঁশের সমন্বয়ে মাচা বানিয়ে তাতে আলু, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সবজির চাষাবাদ করা যাচ্ছে সহজেই। এমন পদ্ধতিতে চাষাবাদে পোকা মাকড়ের উপদ্রবও কম হওয়ায় স্বল্প পুঁজিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
রহিম নামে এক কৃষক বলেন, ‘২ বছর আগে আমি জলাশয়ে সবজি চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। এরপর বাড়ির পুকুরে চাষাবাদ শুরু করি। মাত্র ৬ হাজার টাকা খরচ করে আমি ৩০ হাজার টাকারও বেশি সবজি বিক্রি করেছি। এরপর আশপাশের আরও ৫ টি পুকুর লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছি। এ পদ্ধতিতে পোকামাকড় গাছের কম ক্ষতি করতে পারে। তাই লাভের পরিমাণও বেশি।’
Advertisement
সজিব নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘কম টাকা পুঁজি খাটিয়ে ভাসমান চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আগে পরিবার নিয়ে চিন্তা থাকলেও মাসে এখন ২০ হাজার টাকা ইনকাম করছি। এখন আমরা স্বচ্ছল।’
প্রায় ১শ’ বছর আগে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় কচুরিপানা দিয়ে মাচা বানিয়ে চারা উৎপাদন করা শুরু হয়। ২০১৭ সালে সেই প্রযুক্তিতে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগিয়ে এখন আধুনিক উপায়ে চলছে জলাশয়ের মধ্যে চাষাবাদ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ৫০ বছর পর দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে যাবে। সে সময় মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে জলাশয়ে চাষাবাদের এই প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে আশা তাদের।
বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু বলেন, ‘এ পদ্ধতি বাংলাদেশের কৃষকের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। প্রতিনিয়ত এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে কৃষকরা। আমরাও আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।
দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এ পদ্ধতি এক সময় সাড়া ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘যদি দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়, তাহলে এ পদ্ধতি ছাড়া চাষাবাদের বিকল্প কোনো পদ্ধতি নেই। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি যে দুর্যোগই আসুক না কেন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা কোনো খাদ্য ঘাটতি হতে দেব না।’
Advertisement
গত সাত বছরে শুধুমাত্র বরিশালেই দশ হাজার কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে জলাশয় পেঁয়াজ, আলুসহ নানা ধরনের সবজি ও ফলের চাষাবাদ করছেন। আর দেশের ৭১টি জেলায় প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি কৃষক চাষাবাদ করছেন জলাশয়ে।
পরিত্যক্ত কচুরিপানা ও বাঁশ দিয়ে মাচা বানিয়ে জলাশয়ের মধ্যে সবজি ও ফল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি)