ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ || বৈশাখ ২০ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ : কোনো অভিযোগ ছাড়াই, যে কাউকে বাসা থেকে পল্লবী থানায় তুলে আনে সাদা পোশাকের পুলিশ। টাকা আদায় করে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। এমন এক ঘটনায় এবার ফেঁসে গেছেন পল্লবী থানার দুই এস আইসহ তিনজন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। কিন্তু এরপরই সেই ভুক্তভোগী হন সন্ত্রাসী হামলার শিকার। তারপর আবারও মামলা। কিন্তু সেই মামলার আসামি ধরতে কোনো তৎপরতা নেই পল্লবী থানা পুলিশের।
Advertisement
মীরপুর ১২ নম্বর সেক্টরের ‘ত’ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা উবার চালক শাহেদুল ইসলাম। সন্ত্রাসীদের ভয়ে স্ত্রী সন্তানদের আরেক বাসায় রেখে নিজের বাসায় একাই থাকেন।
সন্ত্রাসী হামলার পর মামলা করে উল্টো নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন। বিচার না পেয়ে আবারও মামলা করেছেন।
তার ওপর প্রথম হামলাটি হয় পয়লা জানুয়ারি। পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, সুমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়। কিন্তু সেই মামলায় কোনো আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পল্লবী থানা পুলিশ। অভিযুক্তরা পল্লবী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের দাবি আসামিরা পলাতক।
উল্টো শাহেদকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় অভিযুক্তরা। মামলা তুলে না নেয়ায় ২৮ ফেব্রুয়ারি তারওপর আবারও হামলা চালায় সন্ত্রাসী সুমন বাহিনী। এবারও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দুটি মামলার অগ্রগতি বলতে সুমনের একটি মোটরবাইক জব্দ করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই।
Advertisement
হামলার শিকার শাহেদুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যেখানে আমি তথ্য দিচ্ছি যে, অভিযুক্ত এখানে আছে। তার মোটরসাইকেল জব্দ হচ্ছে, কিন্তু অভিযুক্ত চলে গেছেন।
পল্লবী খানার আলোচিত সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলা প্রধান আসামি সুমন। তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের একটি দল সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই ঘটনার ভিডিও ছবিও আছে, আছে প্রত্যক্ষদর্শীও।
উল্টো জামিনে মুক্তি পেয়ে নিহত সাহিনুদ্দিনের স্বজনদের হুমকি দিয়েই যাচ্ছে অপরাধীরা। নিরুপায় সাহিনুদ্দিনের মা থানায় একটি জিডি করেন।
সাহিনুদ্দিনের মা থানায় আকলিমা বলেন, আইন এখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। সঠিক বিচার করলে অভিযুক্ত জামিন পেতেন না। টাকা-পয়সা থাকলে আমি মনে হয় বিচার পেতাম। কিন্তু আমার ক্ষমতা নেই এই কারণে আমি বিচার পাচ্ছি না।
Advertisement
এমনকি সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও পায়নি সুমন বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার জিডি করেছেন পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নাজমুল হোসেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি পল্লবী থানা পুলিশ।
উল্টো ঘটনাও আছে পল্লবী থানা এলাকায়। গেলো ৭ এপ্রিল কোনো অভিযোগ ছাড়াই আব্দুর রহিম নামের এক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পল্লবী থানা পুলিশ। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিলো না।
এই ঘটনারও সিসিটিভির ফুটেজ আছে। সেই ফুটেজে দেখা যায় ৭ এপ্রিল দুপুরে পল্লবী থানার এসআই জুনায়েতুল ইসলাম জিতু, এসআই রঞ্জু মিয়া, এএসআই ফয়সাল হোসেন ও কনস্টেবল জহিরুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সাদা পোশাকে মীরপুর ৬ নম্বরের একটি বাসায় যায়। পুলিশ ছাড়াও এই দলে আরও দুই থেকে তিন জন ছিলেন।
বাসা থেকে আটক করা হয় আব্দুর রহিমকে। পরে গ্রেপ্তার বা আটক না দেখিয়েই তাকে থানায় রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
আব্দুর রহিম বলেন, আসলে আমি কীসের আসামি, আমার নামে ওয়ারেন্ট কোথায়? আমি ফাঁসির আসামি হলেও আট থেকে ৯ জন লোক পুলিশের পোশাক ছাড়াই আমাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে?
তিনি আরও বলেন, একজন পুলিশের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর দোষ হয়। এই পুলিশই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কিন্তু কিছু পুলিশের আছে ক্ষমতা, যার জন্য আমি প্রতি মুহূর্তে ভয়ে আছি। আমাকে গুম করে, নাকি মেরে ফেলে, না কোনো বড় ধরনের ঝামেলা হয়।
অভিযোগ আছে ৫০ হাজার টাকায় দফা করে রহিমকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেই সাথে এ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়া হয় তাকে। পরে আদালতে মামলা করেন আব্দুর রহিম। এই ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
জানা যায় পাওনা টাকা নিয়ে জিয়াউল হক শাহিন নামের একজনের সাথে আব্দুর রহিমের বিবাদ ছিলো। শাহিন জানান এ নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রেই আব্দুর রহিমের বাসায় যায় পুলিশ।
Advertisement
ফোনো যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক শাহিন বলেন, বসে আলোচনা করার জন্য তাকে (আব্দুর রহিমকে) থানায় আনা হয়। এটা কোনো বড় বিষয় নয়। আমি তার অফিসে গেছি, কমিশনারের কাছে গেছি কিন্তু তাকে পাচ্ছি না।
এস আই শুভ স্বীকার করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়াই সাদা পোশাকে তারা আব্দুর রহিমের বাসায় যান।
এস আই শুভ বলেন, সহজ স্বীকারোক্তি এবং সত্য কথা যে, সে কোনো আসামি না। হ্যাঁ, ওইদিন আমাদের ইউনিফর্মে যাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমরা সাদা পোশাকে গিয়েছিলাম।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বহু মামলার আসামি গ্রেপ্তার নীরব পল্লবী থানা। এমন নীরবতায় কিশোর গ্যাংসহ মিরপুরের সন্ত্রাসীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই পল্লবী থানার। এমনকি কথা বলতে রাজি নন উপ পুলিশ কমিশনারও।
তবে পুলিশ বলছে ব্যবসায়ী রহিমের বিরুদ্ধে নানা তথ্য মিলছে। তদন্ত শেষে সে সব প্রকাশ করা হবে।