ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ : দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে সপ্তাহান্তে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ৩০০র বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। কিন্তু সেগুলো ইসরায়েলে পৌঁছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবেশী জর্ডান। ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে জর্ডানও ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করার দায়িত্ব নিয়েছিল।
Advertisement
এটি আত্মরক্ষার জন্য করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জর্ডান সরকার। তাদের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডানের জনগণ ও জনবহুল এলাকাগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জর্ডানের নাগরিকরা তাদের সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত। প্রতিবাদে এরই মধ্যে রাস্তায় নেমে এসেছেন তারা।
হুসেইন নামে দেশটির এক রাজনৈতিক কর্মী বলেন, জর্ডান যেভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে, তাতে আমি খুবই বিরক্ত।
বিপদের আশঙ্কা থাকায় তিনি তার পুরো নাম উল্লেখ করতে চাননি। ওই ব্যক্তি বলেন, এখানকার অনেকেই এটি মেনে নিচ্ছে না। আমরা ইরানকে সমর্থন করি না এবং গাজায় এখন যা ঘটছে তার পেছনে ইরানের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করি। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করে, এমন যে কোনো পদক্ষেপের সঙ্গে রয়েছি আমরা।
মারিয়াম নামে আম্মানের এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী বলেন, জর্ডানে ইরানের জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু আমি ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের বাধা দেওয়া ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া প্রত্যাখ্যান করি।
জর্ডানের রানিসহ প্রতি পাঁচজনের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত।
আম্মানের সামরিক বিশ্লেষক মাহমুদ রিদাসাদ বলেন, সপ্তাহান্তে যে ঘটনা ঘটেছে তাকে কখনো ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে তেমনটি বলা যাবে না। বরং জর্ডানের সার্বভৌমত্ব এবং আকাশসীমা রক্ষার জন্য করা হয়েছে। কারণ, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় পড়বে তা জানা যায় না বলে দাবি করেন তিনি।
Advertisement
জর্ডান সহায়তা করেছে বলে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খুশির খবর প্রকাশ সম্পর্কে রিদাসাদ বলেন, এটি ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক তাহানি মুস্তফা জানান, সপ্তাহান্তের ঘটনা নিয়ে জর্ডানের নাগরিকেরা বিভক্ত। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে মানুষ বিস্তারিত জানে না। কারণ এসব বিষয় নিয়ে এখানে বেশি লেখালেখি হয় না।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে জর্ডানের পার্লামেন্টের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য, পরিবহন ও প্লেন বাধা ছাড়াই জর্ডানে ঢুকতে ও ঘুরে বেড়াতে পারবে।
গাজা ইস্যুতে আম্মানে বিক্ষোভ শুরুর পর অনেকে জর্ডান থেকে মার্কিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন মুস্তফা।
Advertisement
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
ফিলিস্তিনের সমর্থনে আম্মানে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি