ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডি),বান্দরবানের রুমা প্রতিনিধি, শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ২৩ চৈত্র ১৪৩০ : বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, ব্যাংক ও থানায় হামলার ঘটনায় ৭ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর মধ্যে রুমা থানায় ৪ টি এবং থানচি থানায় ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়। রুমা থানায় পুলিশ, আনসার, ব্যাংক ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে ৪ টি মামলা দায়ের করেছে এবং থানচি থানায় পুলিশ ও ব্যাংক বাদী হয়ে ৩ টি মামলা দায়ের করেছে।
Advertisement
শনিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী। এসব মামলায় শতাধিক অজ্ঞাত আসামি থাকলেও একটি মামলায়ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কেএনএফের শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রুমা সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় তারা ব্যাংকের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যদের মারধর করে। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪ টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসীরা উপজেলা মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের জিম্মি করে তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়।
মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম জানান, ২ এপ্রিল রাত সোয়া ৮ টার দিকে কেএনএফের ১০/১৫ জন সদস্য অস্ত্র নিয়ে মসজিদে ঢোকে এবং সবার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
রুমা সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াইনু মার্মা বলেন, ‘মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে ব্যাংকের ভল্টের চাবি নিয়ে যায়। তারা সবাই কুকি চিনের সদস্য ছিল। তাদের মুখে কালো রং মাখা ছিল। ৩ এপ্রিল দুপুর ১২ টার দিকে কেএনএফ সদস্যরা থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে রুমা ও থানচি এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করে র্যাব।
Advertisement
পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ব্যাংক লুট করার জন্য হামলা চালায়। কিন্তু তারা ভল্ট ভাঙতে না পারায় ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ৪ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে কেএনএফের ৩০/৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল থানচি থানায় হামলা চালায়। এসময় পুলিশও হামলা চালালে তাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ গোলাগুলির ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও অবশেষে পুলিশের আক্রমণে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
এসব ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করে কেএনএফের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্য শৈ হ্লা বলেন, কেএনএফ শান্তি আলোচনার চুক্তি ভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। তারা ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ম্যানেজারকে অপহরণ করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাই এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আর কোনো শান্তি আলোচনা হতে পারে না। এসব ঘটনার পর হামলাকারী কারা এবং কারা হামলার সঙ্গে জড়িত সেটি জানার পরও অজ্ঞাত আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কেননা কেএনএফ হামলা চালিয়েছে। এটি স্পষ্ট, তারপর তাদের কারো নাম না দেয়া মানে এতে অনেক সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হবে। আসল আসামিরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাবে। আর কেএনএফ কারা, তাদের পরিচয় সবাই জানে, তাদের সঙ্গে টেবিল টক হচ্ছে। তাহলে তাদের নাম বা পরিচয় না জানারও কোনো কারণ নেই। এটি অনভিপ্রেত ও রহস্যজনক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, ‘মামলায় দেড় শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমরা নিশ্চিত নই। তাই সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্ত করে আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে কোনো আসামি পার না পায়।’
Advertisement
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বম সম্প্রদায়ের যুবকদের নিয়ে কুকি চিন জাতীয় উন্নয়ন সংগঠন (কেএনডিও) নামে একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নাথান বম। পরবর্তীতে ২০২২ সালে তার নেতৃত্বে সংগঠনটি সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর গুম-খুন-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে সংগঠনটি। তাদের হামলায় সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পরবর্তীতে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করেন।
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, ব্যাংক ও থানায় হামলার ঘটনায় ৭ টি মামলা দায়ের করা হলেও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি। ছবি সংগৃহীত