ব্যাংক ম্যানেজারের প্রশংসায় র‌্যাব, অপহরণের পর যা ঘটে (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,বান্দারবান প্রতিনিধি,শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২২ চৈত্র ১৪৩০ : আর্থিক সঙ্কট কাটাতে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় শতাধিক কুকিচিন সদস্যরা। এসময় নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র লুটসহ অপহরণ করা হয় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। পরে র‌্যাব তাকে উদ্ধার করে। ম্যানেজারকে উদ্ধারের ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি।

Advertisement

শুক্রবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান র‌্যা‌বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি বান্দরবানের রুমায় সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করে তার ‘দক্ষতা ও বিচক্ষনতার’ প্রশংসা করেন।

বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, গোয়েন্দাসহ অন্যান্য সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন সবার সাথেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

কেএনএফ যে সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ সর্বপ্রথম র‌্যাব সামনে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বিনষ্ট করার বিভিন্ন অপতৎপরতায় তারা লিপ্ত ছিলো। আমাদের অব্যাহত অভিযানের ফলে তারা অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিলো। পুনরায় তারা রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাদের সন্ত্রাসী রূপ আবার তারা জনগণের কাছে উন্মোচিত করেছে।

সেই রাতের হামলার কথা উল্লেখ করে মঈন বলেন, তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। তারা এসেই ব্যাংক ম্যানেজারকে খুঁজছিলেন। আমি ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনের সহাসসিকতার প্রশংসা করি। উনাকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই। উনার দক্ষতা ও বিচক্ষণতার কারণে সেদিন অতোগুলো টাকা তারা নিতে পারেনি।

সন্ত্রাসীরা যখন উনাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিল আপনি কে? তখন উনি বলেছিলেন, আমি কৃষি অফিসে কাজ করি। উনি এভাবে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর পুনরায় সেই আবার ব্যাংকে চলে আসে। আসার পর অন্যান্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করে ম্যানেজার কোথায়? তারা তখন পুলিশের অস্ত্র লুট করে। তারপর আনসার ক্যাম্প থেকেও অস্ত্র লুট করে নেয় এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবরুদও তারা লুট করে।

Advertisement

শতাধিক কুচি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যরা হামলা চালায় জানিয়ে তিনি বলেন, পুনরায় তারা বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যাংক ম্যানেজারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
যখন তারা দেখলো চারিদিকে জানাজানি হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা ব্যাংক ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছিলো এক কোটি টাকা দেয়ার জন্য। তাহলে তারা তাকে ছেড়ে দেবে।
তিনি বিভিন্ন কৌশল নিয়েছিলেন এবং ভল্টের চাবি দেননি বিধায় তাকে সেখান থেকে অপহরণ করা হয়।

অপহরণ করার পরে ব্যাংকের পাশের বেথেলপাড়ার বাইরে দিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটে। ঝিরি পথ ধরে তারা হাঁটতে থাকে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যায়। এভাবে টানা রাত তিনটা পর্যন্ত এই ব্যাংক ম্যানেজারকে নিয়ে হাঁটতে থাকে।

একের পর এক স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। এই সময় তারা ১০ থেকে ১২ জন ছিলো। ব্যাংক ম্যানেজারকে মাঝখানে রেখে তারা সামনে পেছনে হাঁটতে থাকে। তাদের কাছে নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও ছিলো লুণ্ঠিত অস্ত্র।

মঈন জানান, রাতে তিনটার দিকে তারা একটি গহীন এলাকায় বিরতি দেয়। যেখানে ব্যাংক ম্যানেজারকে রাতের খাবার হিসেবে নুডলস দেয়।

আল মঈন ব‌লেন, ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি ও জনমনে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে র‍্যাবের একাধিক আভিযানিক দল। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহসহ র‍্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।

তিনি ব‌লেন, এরই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ম্যানেজারের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কৌশলে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের ফলে ম্যানেজারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়। ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার সময় যেন পরিবারের অন্য সদস্যরা অপহরণের শিকার না হয় সে লক্ষ্যে র‍্যাব সু-কৌশলে হস্তান্তর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাদা পোশাকধারী চৌকস একটি দল রুমা থানাধীন বেথেল পাড়া এবং বড়ুয়া পাড়ার আশেপাশে অবস্থান নেয়।

প‌রে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে পরিবারে কাছে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়। প‌রে র‍্যাব সদস্যরা ম্যানেজার ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা দি‌য়ে র‍্যাব-১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পে নিয়ে আসে।

র‌্যা‌বের কাছে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলা এবং হামলার পরে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।

ম্যানেজারের বরাতে তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা জানতে চেয়েছে, ঘটনার দিন ব্যাংকে কত টাকা নিয়ে আসা হয়েছে এবং ব্যাংকের ভল্টে মোট কত টাকা রক্ষিত আছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ম্যানেজারের কাছে ব্যাংকের ভল্টের চাবি চাইলে তখন ম্যানেজার তাদের কৌশলে ভল্টের চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ভল্ট ভাঙতে চেষ্টা করে এবং পরে ম্যানেজারের কাছ থেকে আরও জানতে পারে যে, ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যাপারটি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে।

ঘটনার পরদিন সকালে সামান্য নাশতা দিয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরি পথ দিয়ে অন্য একটি পাহাড়ের ঝিরিতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫ জনের মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় পুনরায় নিয়েযায়। সেখানে ১৫/২০ মিনিটের মতো বিশ্রামের সুযোগ দেয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দি‌কে তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছালে আবারও তা‌কে গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়।

Advertisement

র‌্যাব জানায়, অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় তার পরিবারকে সেজন্য সতর্ক করে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ওই সূত্র ধরে র‍্যাব অবস্থান শনাক্ত করে। র‍্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেল পাড়া মধ্যবর্তী কোনও এক স্থান থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

মঈন জানান, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে র‍্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।