ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার, ০৩,এপ্রিল ২০২৪ : একই নম্বর প্লেটে চলছে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একাধিক বাস। আবার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ বহু আগে। ট্রাফিক সার্জেন্টকে ম্যানেজ করেই চলছে এ অনিয়ম ও জালিয়াতি। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতি বছর। আর পুলিশ বলছে, নিবন্ধন জালিয়াতি করা বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Advertisement
এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি বাস। চেসিস, বডির ধরন ও রঙ — সবই আলাদা; চলাচলের পথও ভিন্ন। তবে গাড়িগুলোর মিল আছে বিশেষ একটি জায়গায়। আর সেটি হলো রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৫২০৩)।
জানা যায়, বাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী লাল রঙের বাসটি। আর সবচেয়ে নতুন (ছবিতে বাম পাশে থাকা) মিতসুবিশি ফুসোর এসি বাস। দু-তিন দিন হয়েছে বাসটি ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। আর অন্য বাসটির (ছবিতে মাঝের) বয়স বছর তিনেক।
প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে রাজধানী ও তার আশপাশের সড়কগুলোতে অনুসন্ধান চালানোর পর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতির এ প্রমাণ মেলে!
কিছুদিন আগে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্জ-এর তৈরি চেসিসের ওপর চেসিস বসিয়ে ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বাস চালাচ্ছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ। সময় সংবাদ জানতে পারে, এ গাড়িটির নম্বর প্লেটের সাথে আগের একটি গাড়ির নম্বর প্লেটের মিল আছে। এরপর বাসটির খোঁজ পাওয়া যায় আমিনবাজারে থাকা অভি ফিলিং স্টেশনে। আর একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের অন্য গাড়িটির দেখা মিললো মাতুয়াইলে। হিনো একে ১জে চেসিসের ওপর নির্মিত এ বাসের যাত্রাপথ ঢাকা-সিলেট। তথ্য বলছে, বাসটি সড়কে নেমেছে বছর আটেক আগে।
কোন্ বাসের বিপরীতে এ রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি দেয়া হয়েছে, কিংবা আদৌ কি এমন কোনো নাম্বারের অস্তিত্ব আছে কি-না — স্বাভাবিকভাবেই উঠছে এমন প্রশ্ন। তবে অনুসন্ধান বলছে, ঢাকা মেট্রো ব-১৫-২১২৩ বর্তমানে এ নম্বরের কোন গাড়ি সড়কে চলাচলের অনুমোদনই নেই।
Advertisement
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়িটি অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৭ সালে। তবে ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে, আর ট্যাক্স-টোকেনের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালে। এরপর থেকেই এ নম্বরের গাড়িটি সড়কে চলাচলে সব ধরনের বৈধতা হারিয়েছে।
অনুমোদন না থাকার বিষয়টি পরিবহন কোম্পানিটি অকপটেই স্বীকার করলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি কেউ। এমনকি সংবাদ না করার অনুরোধ করে দেয়া হয় উপঢৌকন গ্রহণের প্রস্তাব।
প্রশ্ন হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এত নজরদারির মধ্যেও কীভাবে চলছে অবৈধ এ গাড়ি দুটি।
পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের দাবি, পুলিশকে মাসোহারা (সার্জেন্টদের প্রতি মাসে নির্ধারণ করা চাঁদা) দিয়ে এসব বাস চলছে। আগে থেকেই বলা থাকে, ‘রাস্তায় এ গাড়িগুলা চলবে। মাসে এতো করে দিব, আপনারা এই গাড়িগুলা ধরবেন না।’
চালকদের এমন অভিযোগ অবশ্য ধোপে টেকেনি পুলিশের কাছে। পুলিশের দাবি, সড়কে এমনটি ঘটার প্রশ্নই আসে না।
পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘একটি নম্বর প্লেটে একাধিক গাড়ি চলার সুযোগ নেই। এটি আইনের ব্যত্যয়। আমাদের যারা মাঠপর্যায়ে আছেন, তারা আইন সম্পর্কে ধারণা নিয়েই কাজ করছেন। আমাদের সদস্যরা প্রশিক্ষিত, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
Advertisement
শুধু হানিফ এন্টারপ্রাইজই নয়, দেশের স্বনামধন্য আরও কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। আর এভাবেই প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।