ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪ : মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর শহরের আইকনিক ‘ফ্রান্সিস স্কট কি’ সেতুর একটা বড় অংশ জাহাজের ধাক্কায় ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেতুতে সজোরে ধাক্কা মারে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ ডালি। আর তাতেই চুরমার হয়ে যায় বাল্টিমোর সেতু।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বন্দর বাল্টিমোর থেকে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ২৭ দিনের যাত্রা শুরু করার পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জাহাজটি। বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ করে সব শক্তি হারিয়ে ফেলে কনটেইনার বোঝাই ডালি। ছিলো না কোনো বিদ্যুৎ, এমনকি ইঞ্জিনেও কোনো শক্তি ছিলো না।
সমস্যা সমাধানে একাধিকবার অ্যালার্ম বাজানো হয় এবং ক্রুরা মরিয়াভাবে জাহাজটিতে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যদিও ডালির একটি জরুরি জেনারেটর ছিলো। কিন্তু ইঞ্জিনগুলির শক্তি ফিরিয়ে আনতে পারেনি সেই জেনারেটর।
অন্ধকারে জাহাজের আলো নিভে যাওয়ার কারণে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ক্রুরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেতুর সজোরে আঘাত করে ডালি।
জাহাজের ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন, সেতুর সঙ্গে ধাক্কা না লাগার জন্য সবকিছু করেছেন তারা। ক্রুদেরকে বলা হয়েছিলো জাহাজটিকে বন্দরের কাছে নিয়ে যেতে এবং নোঙর ফেলে দিতে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেনের কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না। স্থানীয় সময় রাত দেড়টার কিছু আগে তারা একটি ‘সাহায্যের বার্তা’ জারি করে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে যে, একটি সংঘর্ষ হতে চলেছে।
সঙ্গে সঙ্গে মেরিল্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা ওই দিকের সমস্ত ট্র্যাফিক বন্ধ করে দেন। তিনি রেডিও ট্র্যাফিকে বলেন, একটি নিয়ন্ত্রণহীন জাহাজ এগিয়ে আসছে। জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত, সকল ট্র্যাফিক বন্ধ করে দিতে হবে।
Advertisement
মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ক্রুদেরকে ‘হিরো’ হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া অনেক জীবন বাঁচিয়েছে আজ। জাহাজ থেকে পাঠানো জরুরি বার্তা ও সংঘর্ষের মধ্যে ব্যবধান ছিলো মাত্র দুই মিনিটের। তবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যেও সেতুতে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলো ট্র্যাফিক বিভাগ।
তবে, ক্রুদের সকল প্রচেষ্টাতেও ডালিকে থামানো যায়নি। এক দশমিক পাঁচ মাইলের সেতুর কংক্রিটের কলামে আছড়ে পড়ে জাহাজটি। আর নিমিষের মধ্যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ফ্রান্সিস স্কট কি সেতু।
এ ঘটনায় ছয় শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা সবাই সেতুতে সড়কের কাজ করছিলেন।
বাল্টিমোর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পানির তাপমাত্রা এবং নদীর স্রোতের কারণে ডুবুরিদের দীর্ঘক্ষণ পানির নিচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে এ অভিযান শেষ হয়েছে। তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ছয়জন শ্রমিক মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের নাগরিক ছিলেন।
Advertisement
জাহাজে থাকা ২২ জন ভারতীয় ক্রু অক্ষত রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাস ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি হেল্পলাইন চালু করেছে।
ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের চেয়ার জেনিফার হোমেন্ডি বলেছেন, ঠিক কী কারণে ডালি শক্তি হারিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।