ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ : বেশ কয়েক বছর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সম্প্রতি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সোমালি জলদস্যুরা। বিশেষ করে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই করে ২৩ নাবিককে জিম্মি করার পর, আলোচনাটা শুরু হয়েছে নতুনভাবে। মুক্তিপণ ছাড়া এদের কবল থেকে মুক্ত হবার ঘটনা বিরল। সোমালিয়ার জলদস্যুদের শক্তির উৎসই কী?
Advertisement
ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকালে সোমালিয়া ছিল একটি জরুরি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মধ্যযুগে বেশ কয়েকটি সোমালি সাম্রাজ্য আঞ্চলিক বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিত। ষাটের দশকে আধুনিক সোমালিয়া ছিল স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের।
তবে, ১৯৬৯ সামরিক স্বৈরাচারী শাসনের সময়েই সোমালিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। এরপর থেকেই শুরু হয় সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের উত্থান।
মূলত বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালি উপকূলে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের বসবাসের পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ ওই অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই করা শুরু করে।
Advertisement
জলস্যুদের মুক্তিপণের অর্থায়নে সেখানে উন্নয়নের সাথে ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। গড়ে উঠছে বিলাসবহুল হোটেল।
বিশাল মুনাফার কারণে সোমালিয়ার অনেক যুদ্ধবাজ গোত্রের নেতারাই সুসংগঠিত উপায়ে ‘জলদস্যু ব্যবসা’ শুরু করেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তরুণরা একে একে জলদস্যুদের দলে নাম লেখাচ্ছে।
তবে এমনসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যের রাঘববোয়ালরা রয়ে গেছে পর্দার অন্তরালেই। আন্তর্জাতিক অনেক বিশ্লেষকরা বলছে, অন্যান্য দেশে থাকা সোমালিরা জলদস্যু বাণিজ্যে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগও করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী এই লুটের টাকার ভাগ পায় থাকে।
২০০৯ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সোমালিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশের মতো উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে। এমনকি সোমালিয়ার অনেক সরকারি কর্মকর্তা জলদস্যুদের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলেও জানা গেছে।
সাম্প্রতিক হামলা
বিবিসি বলছে, গত কয়েকমাসে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়েছে। পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বা ইইউন্যাভ ফর আটালান্টার মতে, গত বছরের নভেম্বরে থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালি উপকূলে অন্তত ১৪ টি জাহাজ ছিনতাই করা হয়েছে।
এর মধ্যে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকা এবং লাইবেরিয়ান-পতাকাবাহী সেন্ট্রাল পার্ক নামের একটি জাহাজের জেলে ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সেন্ট্রাল পার্কের উদ্ধার তৎপরতায় মার্কিন নৌবাহিনী জড়িত ছিলো। পরে তারা জানায়, এটা স্পষ্টতই দস্যুতা এবং আক্রমণকারীরা সম্ভবত সোমালিই ছিল।
ডিসেম্বরে এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়। এখনও জাহাজের নিয়ন্ত্রণ হামলাকারীদের হাতে। জিম্মি আছেন ১৭ জন ক্রু।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো- আইএমবির মতে, এটি ছিলো ছয় বছরের মধ্যে সোমালিয়ায় প্রথম সফল ছিনতাই।
জানুয়ারিতে, ভারতীয় নৌবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়। এক সপ্তাহে তিনটি অভিযানে ১৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে সমর্থ হয় তারা। তাদের মধ্যে ১১ জন ইরানি নাগরিক বাকিরা পাকিস্তানি।
ভারতীয় বাহিনীর তরফে জানানো হয়, এদের সবাই সোমালি দস্যুদের হাতে বন্দী ছিলেন।
বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিমের প্রতিবেদন বলছে, শুধু ২০১৮ সালেই পূর্ব আফ্রিকান জলসীমায় ১১২ টি নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
যার সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ২৩ জন ক্রু সহ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা।