ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুষ্টিয়ার খোকসা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৫ মার্চ ২০২৪ : রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মারা যাওয়া সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচয় দেয়া বৃষ্টি খাতুনের জন্ম কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রামে। সেখানকার বাসিন্দা ও স্বজনদের দাবি, তাকে কেউ দত্তক নেয়া হয়নি, তিনি ভারত থেকেও আসেননি।
সেই সঙ্গে গেলো বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন কোজি ভবনে আগুনে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে জটিলতা দেখার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করার পাশাপাশি কখন থেকে বৃষ্টি খাতুন নিজেকে হিন্দু আর অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসাবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছে, তাও জানে না প্রতিবেশীরা।
Advertisement
বেইলি রোডের আগুনে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ এখনও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট মর্গেই রাখা আছে। পরিচয় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় ডিএনএ পরীক্ষার পর আদালত যে নির্দেশনা দিবে, সেই অনুযায়ী লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।
নিহত ওই সাংবাদিককে নিজের মেয়ে বলে দাবি করে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সাবরুল আলম সবুজ লাশ নিতে মর্গে এসেছিলেন। তবে তাকে নিজের মেয়ে দাবি করলেও সবুজ যে জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে এনেছেন, তাতে নাম ‘বৃষ্টি খাতুন’, বাবার নাম ‘সবুজ শেখ’ এবং মায়ের নাম ‘বিউটি বেগম’ লেখা।
Advertisement
কিন্তু নিহত সাংবাদিক পেশাগত জীবনে ও লেখালেখির জগতে নিজেকে ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। এনিয়েই জটিলতা দেখা দিলে, লাশ এবং বাবা পরিচয়দানকারী সাবরুল আলম সবুজের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ ম্যাচিংয়ের পর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুন ওরফে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মরদেহের জন্য কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রামে অপেক্ষা করছে তার মা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি, খোকসার বাড়িতেই জন্ম নিয়েছে বৃষ্টি। শিশুকাল থেকে লালনপালন করেছেন তারা। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হিসাবে সবার অতি আদরের ছিলো সে।
Advertisement
বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বিলাপ করছেন মা বিউটি পারভীন। আর পাশে অঝোরে কাঁদছে ছোট দুই বোন ঝর্ণা ও বর্ষা। নিকটাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মা বিউটি বলেন, বৃষ্টি আমার মেয়ে। সে অন্য কারও মেয়ে হতে পারে না। আমার বুক চিরে দেখেন, বৃষ্টি আমারই মেয়ে।
স্বজনরা জানান, এসএসসির নিবন্ধন কার্ড, এনআইডির কপি, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সনদ। সব কিছুতেই বৃষ্টি খাতুনের নাম রয়েছে। বৃষ্টিকে সবুজ শেখ দত্তক নেয়া কিংবা তার বাড়ি ভারতে, এমন কথা উড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রশ্ন, ভারত থেকে কবে কীভাবে কুষ্টিয়ার বনগ্রামে সবুজ শেখের বাড়িতে এলো অভিশ্রুতি?
Advertisement
প্রতিবেশীরা জানান, ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় ভালো ছিলো বৃষ্টি। ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি করতো সাংবাদিকতা। স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার।
পরিচয়ের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বৃষ্টির মরদেহ নিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার স্কুলের শিক্ষক আর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহেদ শেখ জানাচ্ছেন, আগা-গোড়া বৃষ্টি খাতুন নামেই তাকে সবাই চিনেছে। ঢাকায় গিয়েই নাম পরিবর্তন করায় জটিলতা তৈরি হল।
Advertisement
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক চার পাঁচ মাস আগে হঠাৎ বৃষ্টি খাতুন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নাম ধারণ করে একটি ফেসবুক আইডি খুলেন। তবে, বৃষ্টি খাতুন কবে থেকে নিজেকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী আর হিন্দু হিসাবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছেন তাও জানে না খোকসার বনগ্রাম গ্রামের মানুষ।