ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,রোববার, ০৩ মার্চ ২০২৪ : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে বছরের শুরুটা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) উৎসবমুখর ছিল। তবে ভোটগ্রহণের পর থেকে প্রায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা আলোচনা-সমালোচনায় ভরপুর থেকেছে। ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনে অংশ নেয়া দুই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ‘ভোটে অনিয়ম’ নিয়ে জড়ায় বাকযুদ্ধে।
Advertisement
আর ফলাফল ঘোষণার পরে পদটি নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়ায় আদালতে। একে ঘিরে দুই প্রার্থীর বিভিন্ন সময়ের নানা বক্তব্য ও আদালতের রায় নিয়ে প্রায় ২০২২ সালের শেষ মুহূর্তজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যা দেশের জাতীয় নির্বাচনকেও হার মানায়!
Advertisement
গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের দুই প্যানেলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে একটি ছিল ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তার প্যানেল এবং অন্যটি ছিল মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান প্যানেল। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর গত ২৮ জানুয়ারি বিএফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় ভোটগ্রহণ।
ভোটগ্রহণের দিনই জায়েদের বিরুদ্ধে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ। যা নিয়ে নির্বাচনের পরবর্তী কয়েকদিন এফডিসিকেন্দ্রিক সংগঠন ও শিল্পীরা নানা আলোচনা-সমালোচনা করতে থাকেন।
Advertisement
ভোটগ্রহণের পরদিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি ভোর ৬টা নাগাদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। ভোটে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ জয় লাভ করলেও সাধারণ সম্পাদকের পদে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন নিপুণ।
আপিল বোর্ডে অভিযোগ জানানোর পরে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়াররম্যান সোহানুর রহমান সোহান এই ঘোষণা দেন।
এরপর পদটির রায় আদালতে গড়ায়। জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত।
এছাড়া আদালত থেকে চূড়ান্ত রায় আসার আগ পর্যন্ত পদটির দায়িত্ব কেউ পালন করবেন না বলেও জানানো হয়। তারপর থেকে জায়েদ-নিপুণের আদালতের রায় নিয়ে বিভিন্ন সময় পাল্টাপাল্টি সংবাদমাধ্যমে নানা মন্তব্য দিতে দেখা যায়। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমে সমালোচনাই হয় বেশি।
নতুন প্যানেল ক্ষমতায় আসার পরে সংগঠনের অনেক কার্যক্রমে পরিবর্তনও দেখা যায়। আগে মিশা-জায়েদ প্যানেল ক্ষমতায় থাকাকালীন সংগঠনের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেয়া এবং উৎসব-অনুষ্ঠানে উপহার দেয়া চোখে পড়েছে।
Advertisement
কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সদস্যরা দায়িত্ব নেয়া ও মিশা-জায়েদ প্যানেলের নির্বাচিত কিছু প্রার্থির পদত্যাগের পরে সাধারণ শিল্পীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নতুন কমিটি নিয়ে। পহেলা বৈশাকে কয়েকজন শিল্পী ব্যতীত কারো বাসায় উপহার পাঠিয়ে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল সেই সময়।
তখন অভিনেত্রী মুনমুন, তানিন সুবহা ও অভি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইলিয়াস-নিপুণ প্যানেল নিয়ে। তানিন সুবহা সেই সময় বলেছিলেন, ‘শিল্পী সমিতির সদস্য হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন উৎসবে উপহার পেয়েছি। সমিতি থেকে ফোন করে বাসায় উপহার পাঠিয়েছে। কিন্তু বর্তমান কমিটি আসার পর নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কথাই যদি বলি তা হলে বলবো, এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আমন্ত্রণ পত্র, বৈশাখী উপহার ও ইফতারের দাওয়াতও দেয়া হয়নি। আপনারা আপনাদের কাছের নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীদের উপহার দিয়ে ফেসবুকে ঢালাওভাবে শো অফ করছেন। তাহলে আমরা কী? আমরা কি শিল্পী না? দায়িত্ব না নিতে পারলে চেয়ারে বসেন কেন?
আবার আদালত থেকে নিপুণের পক্ষে রায় আসার আগেই অনেকটা জোর-দখল করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের অভিযোগ ছিল নিপুণের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে গত আগস্টে সমিতির মাসিক সভায় সদস্যদের দেয়া পরিচয়পত্রে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিপুণের স্বাক্ষর দেখা যায়। সেসব পরিচয়পত্রের ছবি সোশ্যালে ছড়িয়ে পড়লে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে সেসময় সমিতির সভাপতি কাঞ্চনের কাছে জানতে চাওয়া হলে কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এ ব্যাপারে যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে কোর্টে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।’
Advertisement
শিল্পী সমিতি নিয়ে যখন নানা সমালোচনা, সেসময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমে এক বক্তব্যে জায়েদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচনের পরে তাকে এফডিসিতে দেখা যায় না কেন? জবাবে অভিনেতার ভাষ্য ছিল, নিপুণ জোর করে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন। আদালত অবমাননা করছেন এ অবস্থাায় এফডিসিতে যাওয়া লজ্জাজনক।
একজন মানুষ নির্লজ্জ হলেই জোর করে চেয়ারে বসতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন জায়েদ। অভিনেতার মন্তব্য ও আদালতের রায় অবমাননা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে গত নভেম্বরের শুরুতে নিপুণ বলেছিলেন, ‘চেয়ার কি কখনো দখল করা যায়, আমি ঠিক জানি না। দখল সেটাই হয়, যদি অনেক লোকজন নিয়ে কিছু দখল করা হয়। আমি তো একাই যাচ্ছি-আসছি। কোনো চেয়ার দখল করিনি। দখলে আমি অভ্যস্ত না। যেটা সুস্থভাবে আসে সেটাতে অভ্যস্ত আমি।’
এফডিসিতে না যাওয়ার ক্ষেত্রে জায়েদের লজ্জার মন্তব্যের প্রেক্ষিতেও সেসময় কথা বলেছিলেন নিপুণ। বলেছিলেন, ‘রোজার ঈদে আসেনি সে। আবার প্রতি মাসেই সমিতিতে বিভিন্ন শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে তো সে একজন শিল্পী হিসেবেও আসতে পারে। কিন্তু তিনি তা করেননি। এফডিসিতে আসতে যদি খুব লজ্জা লাগে তাহলে বোরকা পরে আসুক। আমাদের জানাক, কাভার করে এসে জাস্ট চলে যাব।’
সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে যখন বছরের ১০টি মাস জায়েদ-নিপুণের নানা মন্তব্য চলতে থাকে, তারই মধ্যে গত ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে হাইকোর্ট থেকে দেয়া রায় স্থগিত রেখে পদটির দাবিদার অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারের লিভ টু আপিল (আপিলের জন্য অনুমতি) গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ওই সময় অভিনেত্রীর পক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেছিলেন, আপিল বিভাগের এই আদেশের পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণের দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা রইলো না। তবে নিপুণের আইনজীবীর এই মন্তব্য ও হাইকোর্টের সবশেষ এই আদেশের ব্যাপারে পাল্টা মন্তব্য করেন শিল্পী সমিতির সাবেক দুই বারের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ।
এই চিত্রনায়ক সেই সময় বলেছিলেন, ‘এই রায় চূড়ান্ত কোনো রায় না। চূড়ান্ত রায়ে জয় আমারই হবে। রায় হয়েছে একভাবে, আর তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভিন্নভাবে। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের কাছে সংবাদমাধ্যমের জানতে চাওয়া উচিত।’