ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪ : রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে আহত ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার ঘটনা। বাণিজ্যিক ওই ভবনে আগুন লাগার পর জীবন বাঁচাতে সবাই প্রাণপণে ছুটেছেন। এদের মধ্যে একজন ফয়সাল হোসেন। একটি গণমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।
Advertisement
শনিবার (২ মার্চ) দুপুরে হাসপাতালে তিনি জানান, ওই রাতে (বৃহস্পতিবার) বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে যান ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ। দুটি পাঞ্জাবি কেনার পর আগুন লাগার কথা শুনতে পান তিনি।
তিনি জানান, ভবনের তৃতীয় তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলেও বের হতে পারেননি। আগুন লাগার পর ভবনের গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
Advertisement
পরে আবার তিনতলার পাঞ্জাবির ওই দোকানে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। ততক্ষণে পুরো কক্ষ ধোঁয়া চলে এসেছে। বিদ্যুৎও চলে যায়। পুরো ভবনেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ওই কক্ষে অনেকের সঙ্গে আটকে ছিলেন ফয়সাল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরে তাকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
তিনি বলেন, আটকা থাকা অবস্থায় ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন মেঝেতে শুয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাঞ্জাবি ও রুমাল ভিজিয়ে মুখে পানি দিচ্ছিলেন। বেঁচে ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন প্রতি সেকেন্ডকে ১ ঘণ্টার মতো মনে হচ্ছিল।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমার ১০ মাসের একটি মেয়ে রয়েছে। শুধু বাবা ডাকতে পারে। সেসময় শুধু মেয়ের ছবি চোখের সামনে ভাসছিল। ওর জন্য কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছিল। আগুন লাগার খবর পেয়ে বাবা বারবার ফোন করছিলেন। কয়েকবার বাবার ফোন কেটে দেই। বেঁচে ফিরবেন কি না আর দেখা হবে কি না, সেটা ভেবে পরে বাবার ফোন ধরে দোয়া করতে বলি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চুমুক নামের একটি খাবার দোকানের দুই মালিকসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তির হলেন-চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং কাচ্চি ভাই নামে আরেকটি খাবারের দোকানের ব্যবস্থাপক মো. জিসান ওই ভবনের ম্যানেজার।
Advertisement
শুক্রবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভবনের নিচতলার খাবার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ করতে চাইলে তা পারবেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
Advertisement
এ অগ্নিকাণ্ডে ভবনের মালিকের দায়িত্বের কোনও অবহেলা রয়েছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ভবনের মালিক থেকে শুরু করে এ ঘটনায় যার দায় পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।