বেইলি রোডে আগুন: ৪০ মিনিটের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সাদ মাহমুদ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪ : নাজমুল, জুনায়েদ, কাজী নওসাদ আনান ও সাদ মাহমুদ। এই চার বন্ধু মিলে লিপ ইয়ারের দিনে (২৯ ফেব্রুয়ারি) খেতে গিয়েছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডের আগুন লাগা ভবন ‘গ্রিন কোজি কটেজে’। সেদিনের সেই ভয়াবহ আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বন্ধু। এরমধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে, অন্যজনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর দুইজন চিকিৎসা নিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

শনিবার (২ মার্চ) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা ১১ জনের মধ্যে ছয়জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তাদের একজন সাদ মাহমুদ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেদিনের ভয়াবহ ওই ট্রাজেডির রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সাদ মাহমুদ বলেন, যেহেতু লিপ ইয়ার ছিল, আমরা চার বন্ধু মিলে রেস্টুরেন্টে যাই। আমাদের এক বন্ধু আগে ওয়াশরুমে যায়, ওইসময় আমরা তিনজন একসঙ্গে ছিলাম। তখনই আগুন লাগে। পরে আমরা তিনজন আটকা পড়ি। এরপর আমরা যখন বের হয়ে যেতে নিচে যাই, তখন দেখি নিচ থেকে অনেক ধোঁয়া আসছে। পরে আর আমরা নিচে যেতে পারিনি। এরপর আমরা উপরের দিকে যাই।

তিনি বলেন, উপরে যখন যাচ্ছিলাম তখন সিঁড়িতে একটা হট্টগোল লেগে যায়। কারণ, সবাই প্যানিক হয়ে উঠে, বিদ্যুৎ চলে যায়, আবার ধোঁয়া ছিল অনেক। আমার বন্ধুদের মধ্যে দুইজন আমার সাথেই ছিল। তারা উপরে আসতে আসতে প্যানিক হয়ে হয়তো নিচে চলে যায়। আর আমি ৬ তলায় একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে যাই। ওখানে আমি আটকা ছিলাম আর ওরা মনে হয় সিঁড়িতে আটকা পড়ে যায়। পরে ওদের আর খুঁজে পাইনি।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাদ মাহমুদ বলেন, আমরা রেস্টুরেন্টে বসে ছিলাম। ওই সময় রেস্টুরেন্টের রিসিপসনিস্ট প্রথমে খেয়াল করেন যে আগুন লেগেছে। তিনি আমাদের বলার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুন অনেক বেড়ে যায়। পরে আমরা উপর থেকে নিচে নামার জন্য সিঁড়ি দিয়ে দুই-তিন স্টেপ নামতেই দেখি- সেখান থেকে অনেক ধোঁয়া আসছে, নিচে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। প্রবেশপথ ও বের হওয়ার একটাই রাস্তা ছিল, ওইখানেই আগুন লেগেছিল। বাইরে বের হওয়া সম্ভব ছিল না। আর আমরা যখন নিচে যাওয়া শুরু করি, তখন উল্টো নিচ থেকেই মানুষ উপরে আসা শুরু করে। পরে আমার সবাই প্যানিক হয়ে আবার উপরে দৌড়ে ছাদের দিকে উঠে যাই।

সাদ বলেন, ওইসময় ছাদের দিক থেকেও অনেকে প্যানিক হয়ে নিচের দিকে নেমে আসছিল। তখন আমরা কনফিউজড হয়ে যাই যে, ছাদের দরজা আবার বন্ধ বা তালা দেয়া কিনা। সে সময় আমার যে দুই বন্ধু সঙ্গে ছিল, তারাও মনে হয় প্যানিক হয়ে আবার নিচে নেমে যায়।

Advertisement

তিনি জানান, আমি যে ফ্লোরে ছিলাম ওই ফ্লোরে থেকে যাই। পরে ঘুরে দেখি আমার বন্ধুরা নেই। আর অনেক ধোঁয়া ছিল, কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মানুষ ছিল অনেক, সেখানে আমি আটকে যাই। আমি ওই রেস্টুরেন্টে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো আটকে ছিলাম। প্রথমদিকে তেমন সমস্যা হচ্ছিল না, আগুনের কতটুকু জায়গায় লেগেছে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না, শুধু ধোঁয়া আসছিল। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর আস্তে আস্তে যখন সাফোকেশন শুরু হয়, তখন ওই ফ্লোরে থাকা যাচ্ছিল না।

Advertisement

সাদ বলেন, ওইসময় আমারা ৬ তলায় ছিলাম, তার পেছন সাইডে একটা কিচেন ছিল, পরে সেখানে আমরা ১৫ থেকে ২০ জন ঢুকে যাই। সেখানে কিছুসময় ছিলাম, ওই সময় কিচেনে ধোঁয়াটা একটু কম যাচ্ছিল। অনেকে আবার রেস্টুরেন্টের পেছনের দিকের গ্লাস ভেঙে ফেলে। পরে চার-পাঁচজনের মতো নিচে লাফ দেয়। যেহেতু উচ্চতা অনেক ছিল, দুই-তিন তলা হলে হয়তো আমরাও লাফ দিতাম। কিন্তু এত উচ্চতার কারণে আমার আর জাম্প করিনি, কিচেনেই ছিলাম। আমরা অপেক্ষা করছিলাম যদি উদ্ধার করতে আসে।

Advertisement

কিচেনে আধা ঘণ্টা-৪০ মিনিট থাকার সময় আমি ফোনে সবার সঙ্গে কানেকটেড ছিলাম। পরিবারের সদস্যরাও এরমধ্যেই ভবনের নিচে চলে এসেছিল, তারা বারবার বলছিল- ফায়ার সার্ভিস রেসকিউ করছে, তোমরা হাল ছেড়ো না। এরকম চলতে থাকার পর একসময় বলে- ছাদে উদ্ধারকাজ করছে, তোমরা ছাদে যাও। কিন্তু আমরা কিচেন থেকে যে বের হবো তার কোনো উপায় ছিল না, ধোঁয়া ছিল প্রচুর। পরে আমরা বলি আমরা কিচেন থেকে বের হতে পারবো না, যদি আমাদের ফ্লোরে আসে তাহলে আমরা একটা চান্স নিতে পারি, এছাড়া বের হতে পারবো না। এর ৭-৮ মিনিট পর আমাদের জানায়, তোমাদের ফ্লোরে ক্রেন আসছে, শুধু বের হয়ে ফ্রন্ট সাইডে আসো। সেখান থেকে রেসকিউ করছে।

Advertisement

পরে আমরা যারা ১২-১৫ জনের মতো ছিলাম, দরজা খুলেই দেখি পুরো ধোঁয়ায় ছেয়ে আসে। আমরা শুধু কোনোমতো দৌড় দেই। ওই সময় শুধু এতটুকু খেয়াল করি যে ওই ফ্লোর ইতোমধ্যেই আগুন চলে এসেছে। সিঁড়িটা যেহেতু মাঝখানে ছিল, আর কিচেন বেকসাইডে, ফ্রন্ট সাইডে আসার পরই আগুন দেখতে পাই। পরে আমাদের উদ্ধার করা হয়।