মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর আদরের বান্দাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নেমে এসেছেন প্রথম আসমানে। দয়ার দৃষ্টিতে দরদমাখা কুদরতি কণ্ঠে ডেকে ডেকে বলছেন, হে আমার আদরের বান্দা! আছো কি কেউ? যে দুনিয়ার মোহে ক্ষমতার লোভে ও অসৎ সঙ্গীদের ধোঁকায় পড়ে গুনাহের চোরাবালীতে আটকে গেছো, আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আছো কি কেউ? যে রিযিকের কষ্টে দিনাতিপাত করছো, অভাব যার পিছু ছাড়ছে না, আমার কাছে রিযিক প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে অভাবমুক্ত করবো।
Advertisement
কুমিল্লা মেঘনা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মেঘনা প্রতিনিধি,রোববার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : প্রিয় মেঘনাবাসী, মেঘনায় যারা সাংবাদিকতা করে সবারই কমবেশি আত্ম মর্যাদা আছে, এর মধ্যে কেউ যদি অপ-সাংবাদিকতা -চাঁদাবাজী /ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকল সাংবাদিকদের মান ক্ষুণ্ণ না করে যে করেছে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবেন এবং মেঘনা উপজেলা প্রেসক্লাবে সঠিক প্রমান সহ অবগত করবেন, আমরা সহযোগিতা করব।
সভাপতি -মাহমুদুল হাসান বিপ্লব সিকদার -০১৮১৪৯০৯০৮৫।
সাধারণ সম্পাদক -শহিদুজ্জান রনি -০১৭১১৯১০৪১১
_____________________________________________________________________
আছো কি কেউ? যে ঋণগ্রস্ত, কোনোভাবেই ঋণ শোধ করতে পারছো না, ঋণের বোঝা বইতে-বইতে তুমি আজ বড় ক্লান্ত, আমার কাছে পানাহ্ চাও, আমি তোমাকে ঋণমুক্ত করবো। আছো কি কেউ? যে বিপদগ্রস্ত, বিপদ যার নিত্যসঙ্গী, হাজারো ধরনের বিপদ অক্টোপাসের মতো যাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। আমার কাছে পরিত্রাণ চাও, আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করবো।
Advertisement
এভাবে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ডাকছেন। আর কেনোই-বা ডাকবেন না? আজ তো ‘পবিত্র শবে বরাত’। মহান আল্লাহ পবিত্র এ রজনীতে তাঁর বান্দাদের জন্য দয়ার চাদর বিছিয়ে দেন। উন্মুক্ত করেন ক্ষমার সব দরজা। ফার্সী ভাষায় ‘শব’ অর্থ রজনী, আর ‘বরাত’ শব্দটি আরবী, এর অর্থ ‘মুক্তি’। সুতরাং শবে বরাত অর্থ ‘মুক্তির রজনী’। আরবী ভাষায় পবিত্র এ রজনীকে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘লাইলাতুম মিন নিছ্ফি শাবান’ বলা হয়। হাদীসের ভাষায় এ রাতকে লাইলাতুম মিন নিছ্ফি শাবান (মধ্য শাবানের রাত) নামেই ব্যক্ত করা হয়েছে। মূলত শাবান মাসের ১৫তম রজনীকেই লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুম মিন নিছ্ফি শাবান বা শবে বরাত বলা হয়।
Advertisement
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আমি একে (কোরআনকে) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি ভীতি প্রদর্শনকারী। এ রাতেই প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সীদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। (সূরা দুখান: ৩-৪) উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রায় বারোটি প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থে ‘বরকতময় রাত’ দ্বারা শাবান মাসের ১৫তম রজনী তথা লাইলাতুল বরাত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
Advertisement
শরীয়তের অকাট্য দলিল হাদীস দ্বারাও এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব দিনের আলোর ন্যায় প্রমাণিত। সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ সুনানে তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ্তে এ মহান রাতের ফজিলত প্রসঙ্গে পৃথক অধ্যায় রচনা করে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) শয্যাপার্শ্বে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। অতঃপর তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে পেলাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এই আশঙ্কা করছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর অবিচার করবেন? হযরত আয়েশা (রা.) বললেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গমন করেছেন। অতঃপর মহানবী (সা.) তাকে বললেন, তুমি কি জানো না; আজ ১৫ই শাবান? প্রতি বছর এই রাতে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং ‘বনু কালব’ গোত্রের পালিত ছাগল পালের শরীরের পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহ্মাদ, হাদীস নং-২৬০২৮)
Advertisement
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫তম রজনী আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো এবং পরবর্তী দিন রোজা রাখো। কেননা এ রাতে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন অর্থাৎ বান্দার খুব কাছে চলে আসেন। অতঃপর বান্দাদের ডেকে-ডেকে বলতে থাকেন, আছে কি কোনো রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক প্রদান করবো। আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইব্নে মাযাহ, হাদীস নং-১৩৮৮্, (শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ই শাবানের রাতে মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন, তবে দুই ব্যক্তি ব্যতীত। এক. যে পরশ্রীকাতর, দুই. যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৭৬)
এ ছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস গ্রন্থের মাঝে লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের ফযীলত সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত। সুতরাং এই রাতে মুসলমানদের করণীয় হলো, নফল নামায, কোরআন তিলাওয়াত, যিকির, দোয়া ও ইস্তেগফার করা, কবর জিয়ারত করা এবং পরবর্তী দিন রোজা রাখা ইত্যাদি।
মহান রাব্বুল আলামিন এ রাতেও কয়েক শ্রেণীর লোকদের ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। যথা: শিরককারী, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী, যিনাকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী, মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, পরশ্রীকাতর ব্যক্তি, অত্যাচারী শাসক, ঘুষ গ্রহণকারী এবং টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। তবে এরা যদি স্বীয় অপরাধের উপর অনুতপ্ত হয়ে পরিপূর্ণরূপে তাওবাহ করে এবং ভবিষ্যতে এহেন অপরাধে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
এ রাতে হালুয়া, রুটি বা খিচুড়ি রান্না করা, খাওয়া বা বিতরণ করা ফযীলতের কাজ হিসেবে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এগুলোর কারণে শবে বরাতের ইবাদত-বন্দেগীতে যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাঞ্ছণীয়। তবে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগীর সুবিধার্থে বাড়তি খাবারের আয়োজন করা দোষণীয় নয়। এ রাতে আতশবাজী করে মুসুল্লিদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা নাজায়িয ও হারাম।
Advertisement
প্রিয় পাঠক! এ রাত হতে পারে আমাদের জীবনের শেষ শবে বরাত। তাই আসুন, এ রাতে অতীতের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হই। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করি মহান প্রভুর দরবারে। ঢেলে দিই হৃদয়ের সবটুকু আকুতি। তওবার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন করি গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তর-আত্মাকে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের শবে বরাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : মুফাস্সিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক