ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহকালে মারধরের শিকার ৩ সাংবাদিক

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় ফুলের দাম। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ফুটপাত ও রাস্তার কিছু অংশ দখল করে গড়ে উঠা দোকানগুলোতে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দোকানের কর্মচারী কর্তৃক অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিকরা। এ হামলায় ঘটনায় তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাহবাগের পাইকারি ফুলের দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ মো. মেরিনের মালিকানাধীন ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে।

মারধরের শিকার তিন সাংবাদিক হলেন নিউজ বাংলা-২৪ ডটকমের মনিরুল ইসলাম, রেডিও টুডের মো. ইমদাদুল আজাদ ও বিডি নিউজ-২৪ ডটকমের রাসেল সরকার। তিনজন সাংবাদিকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এর মধ্যে, ইমদাদুল আজাদের ডান চোখের দুই পাশে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

Advertisement

এই ঘটনার খবর শুনে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের হামলার কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে ওখানে অবস্থানরত কিছু পুলিশ তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এক পর্যায়ে, ওখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়েরর একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। একইসাথে দোকানিদের হামলা ও ফুটপাত দখল করাকে বৈধতা দিতে থাকে।

এরপর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে হামলায় অভিযুক্তকে ধরে থানায় নিয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৬-৭ অজ্ঞাতনামা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- পায়েল (৩৫), সাল্লু (২৭), আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), বুলু (৩২), দিদার (৩১), বাবু (৩০), জাহাঙ্গীর (৩২)। তারা সবাই শাহবাগ ফুল মার্কেটের কর্মচারী।

ঘটনার বর্ননায় মামলার এজাহারে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি পেশাগত কাজে আমার কলিগ বিডি নিউজ বাংলা-২৪ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো: রাসেল সরকারকে সাথে নিয়ে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেট এর ফুলতলা ফ্লাওয়ার সপে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে যাই। ওই দোকানে কর্মরত পায়েল নামে একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে সে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে দেন। এরপর আমাদেরকে ‘ভূয়া সাংবাদিক’ বলে আখ্যায়িত করে। আমরা মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ করলে সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে এলোপাথারি কিল, ঘুষি চড়-থাপ্পর মারতে শুরু করে। আমার কলিগ (রাসেল) তার প্রতিবাদ করতে গেলে পায়েল, সাল্লু, আঃ রাজ্জাক, বুলু, দিদার, বাবু এবং জাহাঙ্গীরসহ আশেপাশের দোকানের কর্মচারীরা এসে আমাদের দু-জনকে মারপিট করে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমার অন্য কলিগ মো: ইমদাদুল আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকেও মারপিট করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বিবাদীরা পিছন দিক থেকে আমাদের উপর আবার অতর্কিত হামলা করে। এসময় ইমদাদকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথারি মারপিট করে, তার ডান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমাদেরকে চিনতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এবং আহত ইমদাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। ইমদাদুল আজাদের চোখে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মনিরুল ইসলাম।

মারধরের শিকার হওয়া রেডিও টুডের ঢাবি প্রতিবেদক ইমদাদুল আজাদ বলেন, নিউজবাংলার ঢাবি প্রতিনিধি মনিরুল ভাইকে মারধর করা হয়েছে শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। বিডিনিউজের রাসেল ভাই সেখানেই ছিলেন। সারাবাংলা ডটনেটের ঢাবি প্রতিনিধি রাহাতুল ইসলাম রাফি ভাইও আমার মতো খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করছিলাম। এরকম সময় মনিরুল ভাইকে মারধর করেছিলেন যিনি, তিনিসহ আরও কয়েকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেন। আমাকে তারা এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন। তাদের একজনের ঘুষিতে আমার চশমা ভেঙে যায়। তাদের মারধরে আমার চোখের দুই পাশে কেটে গেছে। পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

Advertisement

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ ফুলতলা ফ্লাওয়ার সপের মালিক মো. মেরিন শেখ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি ঢাকা বাইরে আছি। শুনেছি দোকানে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিন সাংবাদিককে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেটে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছি।