শিশু গৃহকর্মী মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড়

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকের বাসায় একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। ছয় মাস আগেও সাত বছরের এক শিশু গৃহকর্মী লাফ দিয়ে নিচে পড়ে।

Advertisement

এরপর আবারও আরেক শিশু গৃহকর্মী প্রীতি ওরাং আটতলা থেকে লাফ দিয়ে ১ তলার গ্যারেজের ছাঁদে পড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। দুটি ঘটনাতেই থানায় মামলা দায়ের হয়। সামাজিক মাধ্যমে এবং অন্যান্য পর্যায়ে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও অনেকটা নীরব ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে সুশীল সমাজকে। এই ঘটনায় কোন প্রতিবাদ কিংবা বিবৃতি না দিয়ে অনেকটা আড়ালেই আছেন তারা। যদিও অন্যান্য ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গণমাধ্যমে বিবৃতি কিংবা প্রতিবাদের কথা জানিয়ে থাকেন তারা।

গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের সাংবাদিক আশফাকের বাসার নিচতলার গ্যারেজের ওপর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রীতি ওরাংকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান বাসার কেয়ারটেকার। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ওই ভবনের অষ্টম তলার একটি ফ্ল্যাটে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা।

Advertisement

এই ঘটনায় নিহত প্রীতির বাবা লুকেশ ওড়ান বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আশফাকুল হক ও তানিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

শিশু গৃহকর্মী সংক্রান্ত ঘটনা আশফাকের বাসায় এই প্রথম নয়। ছয় মাস আগেও একই বাসা থেকে ফেরদৌসি নামক এক শিশু গৃহকর্মী পড়ে আহত হওয়ার ঘটনায় শিশুটির মা জোছনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলাতেও সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার শিল্পী নামে এক নারীকে আসামি করা হয়েছিল। আসমা আক্তার ওই শিশুকে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজে নিয়োজিত করেছিল।

Advertisement

একের পর এক ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হলেও অনেকটা নীরব দেশের সুশীল সমাজ। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘প্রীতি ওরাং নামে এক ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর শিশু গৃহকর্মী মোহাম্মদপুরের একটি আবাসিক ভবন থেকে পড়ে নিহত হয়েছে। এই শিশুটি ডেইলি স্টারের সব থেকে প্রভাবশালী সাংবাদিক সৈয়দ আশফাকের বাসায় কাজ করতেন। এর আগেও সৈয়দ সাহেবের বাসা থেকে কাজের মেয়ে পড়েছে, সে যাত্রায় অবশ্য আশফাক সাহেবের কিছু হয়নি, এই যাত্রায় তাকে অবশ্য গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিক ও সম্পাদক যে আশরাফ ভাব নেন, বাংলাদেশের এলিট পত্রিকা এবং বুদ্ধিজীবী বানানোর কারিগরের ভাবটা নেন, তারা এতো ছোটলোক গর্দভ কেন? একজন বুদ্ধিজীবি বানানোর কারিগর বড় বুদ্ধিজীবি কখনো তার বাসায় ১৫ বছরের কোনো শিশুকে নিয়োগ দেবে? জীবনেও দেবে না। এটাতো শিশুশ্রম! যে শিশুশ্রমকে আমরা না বলি, ডেইলি স্টার না বলে, ডেইলি স্টার শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে গোল টেবিল লম্বা টেবিল করে, রিপোর্ট লেখে তারা কীভাবে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়? এটাতো ডেইলি স্টারের জন্য লজ্জার। ওদের সবার মুখে কালো কাপড় বেধে রাখা উচিত। কারণ এটা অন্য কেউ না, দেশের সব থেকে বড় এলিট পত্রিকা, তাদের দায়িত্ব আছে।’

ওপর একজন লিখেছেন, ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বহুতল ভবনের তলা থেকে পড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক এবং তার স্ত্রীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদেরকে জেলে পাঠিয়েছে৷ এমন ঘটনা তাদের বাসায় নতুন নয়। খেয়াল করে দেখলাম বিষয়টি নিয়ে কথিত সুশীল সমাজ ফিসফাস করছে কিন্তু ঝেড়ে কাশছে না।’

Advertisement

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের বাসায় পরপর দুই বার একই ঘটনায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ডেইলি স্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের জ্যেষ্ঠ সহকর্মী ও নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় এক কিশোরী গৃহ সহায়কের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। দুর্ভাগ্যজনক এ ঘটনার জন্য আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তদন্তে কী পাওয়া গেলো, তা জানার অপেক্ষায় আছি আমরা।’

সাংবাদিক আশফাকের বাসায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর শিশু অধিকার কিংবা শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার সুশীল সমাজ অনেকটা মুখে কুলূপ এটেছেন। এখন পর্যন্ত কারো পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রতিবাদ, এমনকি তদন্তের দাবি জানানো হয়নি।

Advertisement

এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং মানবাধিকার ও পরিবেশবাদি সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি এডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ বলেন, ‘এটা এরকম হতে পারে যে ব্যক্তিগত অফেন্সের কারণে অনেকে হয়তো এ নিয়ে কথা বলছেন না। ডেইলি স্টার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে সম্ভবত নেই, হলে সেক্ষেত্রে হয়তো কথা বলতো।’