ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধি,রোববার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : এসিড ছুড়ে নারীদের চেহারা বিকৃতি করে দেয়ার কথা কতই না শোনা যায়। কিন্তু কখনো শুনেছেন গর্ভাশয়ে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে এসিড ঢেলে দেয়ার ঘটনা। বরগুনার বামনায় এমন ঘটনার বিচারও আটকে গেছে পুলিশ, ডাক্তার ও আসামির যৌথ প্রচেষ্টায়। ২০২১ সালে হাইকোর্ট পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি স্থগিত করে দিয়ে বিচারের কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছেন। অসহায় পরিবারটি ছেড়ে দিয়েছে বিচারে আশা।
Advertisement
বরগুনার বামনার হালিমা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী আল আমিন তালুকদারের। কিন্তু দেশে ফেরার পর থেকেই যৌতুকের জন্য হালিমাকে একের পর এক চাপ দিতে থাকে আল আমিন। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। ৪ অক্টোবর ২০১৭ এক মধ্যযুগীয় কায়দায় ভুক্তভোগীর গর্ভাশয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে এসিড ঢেলে দেয় আল আমিন ও তার পরিবার। ৫ অক্টোবর হালিমাকে নেয়া হয় মঠবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে সেখান থেকে হালিমাকে পাঠানো হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজে। সেখানে মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয় হালিমাকে এসিড ছোড়ার ঘটনা সত্য। তবে সেই রিপোর্ট চেপে যায় বরিশাল মেডিকেল। ১ বছর সেই রিপোর্ট আর পুলিশ ও আদালত কারও কাছেই দেয়নি বরিশাল মেডিকেল।
Advertisement
২০২১ সালে আল আমিন হাইকোর্টে আসেন মামলা স্থগিত চেয়ে। যদিও এরমধ্যে তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপরও হাইকোর্ট মামলাটি কার্যক্রম স্থগিত করে হিমাগারে পাঠিয়ে দেয় হাইকোর্ট।
বাদী পক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল বলেন, অনেকগুলো বিষয় লঙ্ঘন হয়েছে। পুলিশের যা দায়িত্ব ছিল সেটা তারা ঠিকমতো পালন করেনি। মঠবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে দায়িত্ব ছিলো সেটা ভিন্নরকম সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অথচ তারা আবার বরিশাল মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেছেন। বরিশাল মেডিকেল কলেজ সিদ্ধান্ত যেটা পেয়েছে সেটা তারা যথা সময়ে পুলিশের কাছে না পাঠানোর কারণে এখন মামলাটা সাক্ষী অবস্থায় রয়েছে। মামলার যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেটা মামলার নথিতে যুক্ত হয়নি।
Advertisement
ভুক্তভোগীর বাবা আলী আকবর বলেন, ‘মাইয়ার তো আর কোনো দোষ নাই। মাইয়া আমরা নিমু। পরে চেয়ারম্যান আমাকে সংবাদ দিছে হেরা মাইয়া নিবো। তবে যারা যারা অন্যায় করছে আমি সবার বিচার চাই।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১১ গ ধারার মামলায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর মামলা শেষ করতে হয় ৬ মাসের মধ্যে। কিন্তু সেই ৬ মাস পেরিয়ে ৭২ মাস পেরিয়ে গেছে। শুধু তাই এই মামলার কোনো ধারাতেই পুলিশ এসিড নিক্ষেপের ঘটনা উল্লেখই করেনি।
Advertisement
সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলাটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেটা স্থগিত হয়ে আছে। ফলে তিনটা সাক্ষী অলরেডি হয়ে যাওয়ার পরে এই মামলাটা এখন এই অবস্থাতে ঝুলে আছে। যতদিন পর্যন্ত স্থগিতাদেশ এইভাবে চলবে ততোদিন এই মামলাটায় আর কোনো অগ্রসর হওয়া যাবে না।