ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),‘বিশেষ প্রতিনিধি,শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ভাই আমি পাগল না। পৈতৃক সম্পত্তির লোভে আমার ভাই আট বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছে। ঠিকমতো আমাকে খাবার দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ দিন আমার উপোস কাটে। কয়েক বছর আগে জমির খতিয়ান রেকর্ডের নামে দলিলে ছোট ভাই আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। শুধু সম্পত্তি নিজের নামে করতে ভাই আমাকে শিকলবন্দি করে রেখেছে। আমি মুক্তি চাই।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা (৩৬)। তিনি ঐ গ্রামের মৃত আলতাব হোসেনের বড় ছেলে। ‘পাগলামির কারণে’ আট বছর ধরে তার পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছেন ছোট ভাই মানিক মিয়া। তিনি রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। খবর পেয়ে রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা তোতার বাড়িতে গিয়ে শিকলবন্দি অবস্হা থেকে তাকে মুক্ত করেছেন।
Advertisement
সুশান্ত বালা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযুক্ত মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে পরে ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা বড়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা তিতুমীর কলেজে পড়াশোনারত অবস্হায় পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিয়ে করানো হয়।
Advertisement
বিয়ের পর স্ত্রীর গর্ভে থাকা সন্তান নষ্ট হওয়ার জের ধরে তাদের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে ১০ বছর আগে স্ত্রী তাকে (তোতা) ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনার দুই বছর পর পাগল আখ্যায়িত করে পরিত্যক্ত একটি ঘরে তোতাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়। তোতার ছোট ভাই মানিক মিয়া নিজে থাকার জন্য পাকা ভবন নির্মাণ করলেও বড় ভাই তোতাকে রাখা হয়েছে ছোট একটি পরিত্যক্ত ঘরে।
Advertisement
সেখানে লোহার শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালা দিয়ে তোতাকে আটকে রাখা হয়েছে। স্হানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তোতা মানসিক রোগে আক্রান্ত, তবে তাকে পাগল বলা যাবে না। তার আচার-আচরণ একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই। উন্নত চিকিত্সা পেলে সে পুরোপুরি সুস্হ্য হতে পারেন। তবে তার ছোট ভাই মানিক মিয়া শুধু সম্পত্তির লোভে ভাইয়ের সুচিকিত্সা না করিয়ে তাকে পাগল প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মানিক মিয়া বলেন, তার বড় ভাই তোতা দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন।
Advertisement
অচেনা কাউকে দেখলে তাকে তিনি মারধর করেন। এ কারণে তাকে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে মানিক মিয়া বলেন, সরকারিভাবে জমি জরিপের পর খতিয়ান রেকর্ডের জন্য বড় ভাইয়ের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। জমি আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়।