ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি,শুক্রবার,২৬ জানুয়ারি ২০২৪ : নিত্যপণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণই নেই। দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে জনজীবন। তিন বেলা খাবার যোগাতে নিম্নআয়ের মানুষের অবস্থা বেগতিক। ঠিক এমন সময় ৩০ টাকায় মিলছে দেড় প্লেট ভাতসহ ৬ পদের আইটেম ‘সিস্টেম’।
Advertisement
বেগুন ভাজা, ডাল ভর্তা, আলু ভাজা, আলু ভর্তা, শাক ভাজা ও অর্ধেক সিদ্ধ ডিম থাকছে এই সিস্টেমে। ব্যতিক্রমী এই সিস্টেমের খোঁজ পাওয়া যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্টেশন বাজারে। ব্যবসায়ী মানিক মিঞা দীর্ঘদিন ধরে চালু রেখেছেন এই সিস্টেম।
দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভিড় জমান হোটেল মাদারীপুরে। বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘সিস্টেম’ বেশ জনপ্রিয়। সিস্টেমের আসল নাম ‘সিক্স আইটেম’।
‘হোটেল মাদারীপুর’ এর মালিক মানিক মিঞা খুব ছোটবেলায় জীবিকার সন্ধানে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চলে যান রাজশাহীতে। এরপর স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার। তার বয়স এখন প্রায় ৫৫। আগে রিকশা চালালেও প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই হোটেল চালু করে মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসের স্টেশন বাজারে হোটেল মাদারীপুরে সকাল ও দুপুরবেলা খাবার পাওয়া যায়। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আবাসিক হল মাদার বখ্শ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। রয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো এই দোকানটির পাশে হওয়ায় অনেকেই খাবার খেতে যান সেখানে।
খাবারের মান নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তিক বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, সিস্টেম এমন একটি খাবার যেটি দাম ও মানে খুব ভালো যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও পাওয়া যায় না। সিস্টেমে বিভিন্ন পদের সমাহার থাকায় এটি খেতে ভালো লাগে এবং খাবারের পরিমাণও মোটামুটি ভালো। বর্তমান দাম বাড়ায় এতো স্বল্পমূল্যে দেড় প্লেট ভাতসহ ছয় পদের খাবার অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। যার ফলে খাবারটি ক্যাম্পাসের সকলের কাছেই প্রিয়।
মাসুদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, খাবারের মান তুলনামূলক যথেষ্ট ভালো আছে, দামও সাধ্যের মধ্যেই। আর সিস্টেম এ যেহেতু শাক, ভাজা, ডিম, ডাল আইটেমগুলো আছে এতে পুষ্টিও ভালো পাওয়া যায়। পদের বিভিন্নতার কারণে খেতেও একঘেয়েমি আসে না। এটি তো আমাদের কাছে মানবিক বটেই হোটেল মালিকদের জন্য অনুকরণীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে থাকছেন আমিনুর রহমান। তিনি মাঝেমধ্যেই খেতে যান সিস্টেম। তিনি বলছেন, এতো কম দামে এমন খাবার রাজশাহীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। কম দাম হলেও খাবারটি বেশ তৃপ্তিদায়ক। তাই আমরা সবাই মিলে খাই।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে চলে গেছেন অথচ হোটেল মাদারীপুরের সিস্টেম খাননি এমন শিক্ষার্থী খুব কমই আছেন বলে জানালেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম।
Advertisement
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে এ খাবার খাওয়া হতো। তবে এখন আর স্টেশন বাজারে তেমন যাওয়া হয় না।
হোটেল মালিক মানিক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন , প্রায় ২০ বছর ধরে হোটেল মাদারীপুরে সিস্টেম চালু আছে। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে সিস্টেম মিলতো মাত্র ৬ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৬ টাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে এখন ৩০ টাকা করা হয়েছে। ছয় পদের খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, অর্ধেক ডিম, বেগুন ভাজা, আলু ভর্তা, শিম ভর্তা ও আলু ভাজা। ডাল অবশ্য সবার জন্য ফ্রি। দোকানে মাছ-মাংস থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সিস্টেমের কদরই সবচেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।
Advertisement
হোটেলটির নামকরণ নিয়ে জানতে চাইলে মানিক মিঞা বলেন, আগে এই দোকানের যিনি মালিক ছিলেন তার বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। তিনি জেলার নামেই খাবারের দোকানের নাম রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পরই এ হোটেল চালু হয় বলে জানান তিনি।