‘অন্ধকার দূর করতে না পারলে শিক্ষার মূল্য কী’(ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার,২৫ জানুয়ারি ২০২৪ : সমাজের একটি অংশকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফার গল্প’ একটি মানবিক গল্প মাত্র। একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুল ও মিথ্যা ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, উপস্থাপনায় পরিবর্তন আসতে পারে কিন্তু গল্প তুলে দেয়ার সুযোগ নেই।

Advertisement

১২ বছর আগে হৃদয় থেকে মৌসুমী হয়ে ওঠা একজনের দেখা মিলবে হাইকোর্ট এলাকায়। সমাজে তাদের পরিচয় হিজড়া জনগোষ্ঠী বলে। শরীর আর মনে আলাদা মৌসুমীদের সমাজ, পরিবার গ্রহণ করেনি। মেলেনি শিক্ষা কিংবা কাজ। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা।

মৌসুমী একাত্তরকে বলেন, বাপ-মাতো আমাদের ত্যাজ্য করে দিয়েছে। বাড়িতে যাইতে পারি না। ফোনে কথা বলি মায়ের সাথে আমরা হিজড়া। হিজড়াদের দুঃখ হিজড়ারাই বুঝবে।

Advertisement

এমন মানুষের সংখ্যটা দেশে কম নয়। আইনিভাবে এদের স্বীকৃতিও মিলিছে। তারপরও তাদের জীবনের গল্প যখন পাঠ্য পুস্তকে স্থান পায় তখন ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। হিজড়াদের সমকামিতার সাথে তুলনা করে এরই মধ্যে আলোচনার ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।

তবে কী সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে শরীফার গল্পটা প্রাসঙ্গিক নয়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করছেন শিশুর পরিবর্তনের সময়ে সমাজের ভিন্নতাকে গ্রহণ করতে শেখাতে হবে দেয়াল টেনে চোখ বন্ধ করে শিক্ষা হয় না।

তিনি বলেন, বাচ্চাদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। প্রান্তিক মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা জন্মাতে হবে। এটা আমাদের মূল্যবোধের বিষয়। শিক্ষা যদি অন্ধকার দূর করতে না পারলো তাহলে শিক্ষার মূল্যটা কী?

সমাজের একটা অংশকে প্রান্তিকে ফেলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই ট্যাবু ভাঙতেই হিজড়াদের বিষয়টি পাঠ্যবইতে আনা হয়েছে।

সমাজ বিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অন্ধকারের চর্চা হয়। আলোটা সেখানে ফেলা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, স্কুলের যে শিক্ষার্থী তৈরি হয়ে আসবে তারা এ ধরনের কুসংস্কার যে, তাদের সঙ্গে মিশবো না, অচ্ছুত-এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হয়ে আসবে। যেখানে ধর্মকে উপজীব্য করে শিক্ষা দেওয়া হয়, সেখানেতো দেখতে পারছি কী ধরনের শ্লীলতাহানি হচ্ছে।

এরই মধ্যে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনায় মন্ত্রনালয়ের ৫ সদস্যের কমিটি করেছে। কমিটিকে সমাজ বিজ্ঞানী না রাখায় সমালোচনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম।

Advertisement

নতুন শিক্ষা কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে শরীফার গল্প।

‘হিজড়া’ সম্প্রদায় নিয়ে লেখা ওই গল্প মূলত একটি সচেতনতামূলক পাঠ। মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা বিষয়ে ধারণা দিতে এই গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কিন্তু গত শুক্রবার জাতীয় শিক্ষক ফোরামের অনুষ্ঠানের মধ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব বই থেকে থেকে শরীফার গল্পের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন।

এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

গল্পের বিপক্ষে পণ্য বর্জনসহ উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীও নানা প্রতিক্রিয়া দেখায়। এরইমধ্যে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, একটা গোষ্ঠী ধর্মকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে

ওই গল্প পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদকে।

Advertisement

অন্য সদস্যরা হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, এনসিটিবির সদস্য মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।