ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পাবনার ঈশ্বরদী প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ : নিজস্ব প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করে তাক লাগালেন পাবনার ঈশ্বরদীর বাসিন্দা আমজাদ হোসেন (৬৩)। নিজের তিনতলা ভবনে ওঠানামার জন্য তিনি এ লিফট তৈরি করেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে তিনি লিফট ব্যবহার করছেন।
আমজাদ হোসেন ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান।
Advertisement
ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের ডাকবাংলোর সামনে দিয়ে চলাচলের পথে অনেক পথচারীকে আমজাদ হোসেনের লিফটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ লিফট দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
উদ্ভাবক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি পেশায় একজন ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান। পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে দুই বছরের ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভোল্টেজ স্টেবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করছি। একসময় আমি টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক শতক জমিতে ইলেকট্রিক সামগ্রী বেচাকেনার জন্য তিনতলা একটি ভবন নির্মাণ করি। এখানকার দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামা জন্য ভবনের পেছনে দিয়ে একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় উঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এছাড়াও দোকানের মালামাল ওঠানো ও নামাতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’
আমজাদ বলেন, ‘এ সমস্যা দূর করতে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করি। তবে শুরুতে বিষয়টি এতো সহজ ছিল না। প্রায় তিন মাস এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি লিফট তৈরির জন্য। প্রথমে একটি কন্ট্রোল বক্স, ১ টন ওজন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, ১ কিলোওয়ার্টের আইপিএস, এক হর্সের মটর তৈরি করি। এরপর স্টিলের ওয়ারের, মেটাল স্ট্রাকচার ও কেবিনের জন্য একরিলিকা গ্লাস দিয়ে লিফট তৈরি শুরু করি। প্রায় তিন মাস প্রচেষ্টার পর দোকানের সামনে তিনতলায় ওঠা-নামার জন্য একটি লিফট তৈরি করতে সক্ষম হই।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক ভবনটি চারতলায় উন্নীত করা যাবে। এজন্য লিফটে চারতলা পর্যন্ত ওঠানামার জন্য লিফট তৈরি করেছি। এখন লিফটে পরীক্ষামূলকভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় চলাচল করছি। এ লিফটে উঠে একটি সুইচ চাপলে দ্বিতীয় তলায় ওঠা যাবে। সেখানে নামার প্রয়োজন না হলে আরেকটি সুইচ টিপে তৃতীয় তলায় ওঠা যাবে। একইভাবে আবার তৃতীয় তলা থেকে নিচে নামতে হবে। একসঙ্গে তিনজনের বেশি মানুষ এ লিফটে যাতায়াত করতে পারবে না। একই সঙ্গে এক টন ওজনের মালামাল ওঠানামা করানো যাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে লিফট চালাতে জেনারেটের প্রয়োজন হয়, কিন্তু আমার এ লিফট আইপিএস দিয়ে চালানো যাবে।’
Advertisement
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এ লিফটে যেসব ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে সবই আমার নিজের তৈরি। লিফটে ব্যবহৃত একটি কন্ট্রোল তৈরি করতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। এটি আমি খুবই স্বল্প খরচে তৈরি করেছি। চারতলা ভবনের একটি লিফট সংযুক্ত করতে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে আমার খরচ হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা।’
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, ‘এ লিফট আমি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করার যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আমার উদ্ভাবিত এ লিফট তৈরির বিষয়টি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাবো।’
‘পাশাপাশি ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিবো। স্বল্প খরচে নির্মিত এ লিফট যদি তিন ও চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার অনুমতি সরকার আমাকে দেয়, তাহলে যারা এ লিফট ব্যবহার করবে তারা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্য এটি ব্যবহার করতে পারবে।’
লিফট দেখতে আসা পথচারী আহমেদ আলী বলেন, ‘সড়কের পাশে এমন লিফট দেখে কৌতূহল হলো। তাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। আমার মতো অনেকেইতো দেখছে। শুনেছি এটি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। এ বিষয়টি আমার কাছে খুবই আশ্চর্য লাগছে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের লিফট তৈরির বিষয়টি আমি শুনেছি। আমার মনে হয় নতুন কিছু তৈরি করা অবশ্যই গর্বের। এ লিফট বিদ্যুৎ চলে গেলেও আইপিএস দিয়ে চলবে। এটি আধুনিক একটি ব্যবস্থা। আশা করি তার এ উদ্ভাবন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে পৌঁছাবে। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকেও তাকে সহযোগিতা করা হতে পারে।’
Advertisement
পাবনা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক শারিফুল হাসান ভুইয়া বলেন, ‘আমজাদ হোসেন যে লিফট তৈরি করেছে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার উপযোগী কিনা তা অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদি এটি ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে দেশের উপকারে আসতে পারে।’