ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মুন্সিগঞ্জ-৩ প্রতিনিধি ,সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ :দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নিয়েছিলেন নব্বই দশকের নাট্যকার ও জনপ্রিয় অভিনেতা রফিকুল্লাহ সেলিম। আসনটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফয়সার বিপ্লব। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছেলে। নির্বাচনে পরাজয় হলেও এ নিয়ে কোনো কষ্ট নেই রফিকুল্লাহ সেলিমের। তবে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় আফসোস রয়েছে বলে জানালেন এই অভিনেতা।
সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং পর্দায় কাজের ব্যাপারে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় রফিকুল্লাহ সেলিমের। নির্বাচনে ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী বলা যায় এটাকে, সূক্ষ্ম ইঞ্জিনিয়ারের সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ পরিচালিত হয়েছে।’
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ দলীয় কয়েকজন প্রার্থী ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিনেতার কথায় স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে―হাস্যরস, ব্যঙ্গাত্মক, না মন থেকে বললেন এ কথা। জবাবে রফিকুল্লাহ সেলিম বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আগে আমি একটি শব্দ বলেছি, “সূক্ষ্ম” শব্দ। এবারের নির্বাচনে এমন কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যে কারণে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে নির্বাচন খুব সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু আসলে তা হয়নি।’
এ অভিনেতা কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমার কথাই যদি বলি, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার বাবার বেশ সুনাম রয়েছে। বাবার সুনামের সঙ্গে আমার পরিচিতি ছিল। দুটো মিলে আমার গ্রহণযোগ্যতার ভালো সম্ভাবনা ছিল। আরেকটি বিষয়, আমার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী যে দু’জন প্রার্থী ছিল তারা একে-অপরকে নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত ছিল। তাদের এই দ্বন্দ্বে কিছু বাস্তবতা ছিল, কিছু বানোয়াটও ছিল। কিন্তু আমি এসবের বাইরে ভালো ছিলাম। সবমিলে নির্বাচনী মাঠে সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে ছিল। আর আমার কাছে যেহেতু মনে হয়েছে কিছু একটা হবে, এ কারণে সেরকম কোনো মুভমেন্টেও ছিলাম না আমি। এর মধ্যেই যতটুকু করেছি তাতে মনে হয়েছে আমার প্রচুর ভোট রয়েছে।’
‘তবে ভোটগ্রহণের দিন আমি যখন কেন্দ্র পরিদর্শন করি তখন আমার কোনো ভোটারের দেখা পাইনি। ভোটগ্রহণের আগে যারা আমার সঙ্গে ছিল, উৎসাহের সঙ্গে কাজ করেছে তাদের দেখা পাইনি। এসব মানুষকে আমি কেন্দ্রেও দেখিনি। আমি কেন্দ্রে যাওয়ার পর তারা আমার কাছে এসে আক্ষেপ করবে, “ভাই আমাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি বা আমার ভোট অন্যরা দিয়ে দিয়েছে।” এমনটা আমাকে কেউ বলেনি। কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি। এর অর্থ কী―আমার ভোটাররা কেন্দ্রেই যায়নি।’
নিজের পক্ষে সমর্থক ভোটারদের ভোটগ্রহণের দিন কেন্দ্রে থাকা স্বাভাবিক বিষয় হলেও অভিনেতা রফিকুল্লাহ সেলিমের ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যতিক্রম। যা তার ভাষ্যতে স্পষ্ট। কিন্তু তার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ কী হতে পারে বলে মনে হয়? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যেটা মনে হয় আমার ভোটারদের হয়তো ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। না হয় তারা ভেবেছে, ভোট তো সুষ্ঠু হবে না। শুধু শুধু গিয়ে লাভ কী? হয়তো এসব বিষয় ভেবে আমার সমর্থকরা ভোট দেয়ার জন্য যায়নি। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে খুব সুচিন্তিত, সুচারুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছে সরকার।’
অভিনেতা রফিকুল্লাহ সেলিম হচ্ছেন মুন্সিগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. কলিমউল্লাহর ছেলে। তার বাবা ছিলেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। যিনি ২০১৭ সালের ১৫ জুন পরপারে পাড়ি জমান। এর চারদিন আগে অভিনেতার মায়ের মৃত্যু হয়। বাবা রাজনীতিবিদ হলেও ছেলে রফিকুল্লাহ সেলিম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অভিনয়শিল্পী ও ব্যবসায়ী হিসেবে।
অভিনয়শিল্পী ও ব্যবসার বাইরে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রফিকুল্লাহ সেলিম বলেন, ‘আমি কখনোই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইনি। বাবার কারণেই রাজনীতিতে জড়ানো আমার। মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টি মোটামুটি বাবার হাতেই গড়া। তো ২০১৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর আমাদের গজারিয়া উপজেলায় যেসব জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ছিল তারা সবাই আমাকে অনেকবার ডেকেছে। আমাকে তারা বারবার জাতীয় পার্টিত যোগদানের কথা বলেছে। আমি তাদের এমনটাও জানিয়েছি যে, আপনাদের সংগঠনে পেছন থেকে আমি সহযোগিতা করব। কিন্তু অফিশিয়ালি যুক্ত হবো না। এভাবে তাদের মোটামুটি কিছুটা সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে গত বছর আমাদের দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেবের নির্দেশে তার সঙ্গে দেখা করি আমি। তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করি। বর্তমানে আমি মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি। আর এবার আমাকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।’
এ অভিনেতা বলেন, ‘সবকিছু মিলে এবারের নির্বাচনে পাস করতে পারলাম না বা কম ভোট পেয়েছি,…। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, সবাই জানেন। এ নিয়ে আর কিছু বলতেও চাই না। এ নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই। কিন্তু আমার একটা আফসোস, যে ভোটগুলো আমি পেয়েছি তা পাওয়ার যোগ্য নই আমি! এ নির্বাচনে না গেলেও পারতাম। কেন এ নির্বাচনে অংশ নিলাম।’