লাখ টাকা ফিতে পাত্রপাত্রীর খোঁজ আছে প্রতারণাও (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,রোববার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ : ম্যারেজ সল্যুশন বিডি ডটকম। ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠানটির মোহাম্মদপুরে নিজস্ব অফিস রয়েছে। বান্ধবীর জন্য পাত্রের সন্ধান চেয়ে ফোন দিলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছোঁয়া মানবজমিনকে বলেন, এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পাত্র-পাত্রীর সন্ধান দেয়া হয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার পাত্র-পাত্রী রয়েছে। সম্প্রতি এক মন্ত্রীর মেয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে পাত্রের সন্ধান চেয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে আসেন। এ ছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর সন্তান-নাতির বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে ম্যারেজ সল্যুশন বিডি থেকে। প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির পাত্র-পাত্রীর সন্ধান দেয়া হয়। একই ভাবে রেজিস্ট্রেশন ফি’র রয়েছে ভিন্নতা। রেজিস্ট্রেশন ফি সাধারণত ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশনের পর এর মেয়াদ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

Advertisement

পাত্র-পাত্রী বায়োডাটা ও চাহিদার সঙ্গে মিলে গেলে সাধারণত এক বছরের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। যদি সেটা না হয় সেক্ষেত্রে সময় আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। ম্যারেজ সল্যুশন-এর এই কর্মী বলেন, আমাদের এখানে সম্প্রতি এক মন্ত্রীর মেয়ে তার বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে এসেছেন। এ ছাড়া একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতির সন্তান এবং ব্যবসায়ীর নাতনীর এখান থেকেই বিয়ে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে পাত্র-পাত্রী সন্ধানের কাজ করে যচ্ছেন বলে জানান তিনি।

 

বনশ্রীতে ম্যারেজ কনসালটেন্ট, বিবাহ বিডি ডটকম-এর নিজস্ব অফিস রয়েছে। কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সাগরের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি গত ১৭ বছর ধরে যাত্রা শুরু করে। আমাদের এখানে বেসিক প্যাকেজ শুরু হয় ৩ হাজার টাকা থেকে। এটির মেয়াদ দেড় মাস পর্যন্ত থাকে। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকায় ম্যাচ ম্যাকিং প্যাকেজ রয়েছে। ২ লাখ টাকার প্যাকেজকে রয়েল ম্যাচ ম্যাচিং বলে। বিয়ের আগে ১ লাখ টাকা এবং বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ১ লাখ টাকা দিতে হয়। এক্ষেত্রে দুই গ্রুপের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। এটির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এটা লাইফটাইম। বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা মেয়াদ থাকে। রয়েল ম্যাচ ম্যাচিংয়ের তালিকায় রয়েছে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা। প্রতিষ্ঠানের বৈধতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সরকারিভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এ ছাড়া আইনি ঝামেলা এড়াতে আমরা আইসিটি অ্যাক্ট মেনে কাজ করি।

এদিকে পাত্র-পাত্রী খোঁজার নামে অনেক ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান প্রায়শই প্রতারণামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরাও পড়ছে তারা। গত ২৮শে আগস্ট কানাডাপ্রবাসী নারীর জন্য পাত্রের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে একদল প্রতারক। কানাডা প্রবাসী সিটিজেন সুন্দরী নারীর জন্য পাত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কৌশলে প্রায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে শামীমা রহমান খান ওরফে সোনিয়া পারভিন ওরফে সীমা নামের এক যুবতীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Advertisement

উত্তরার রাজলক্ষ্মীর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গত ২৭শে আগস্ট বিকালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ওই প্রতারক হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদরের ৯ নম্বর সড়ক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমান খান ওরফে ইব্রাহিম আলীর মেয়ে।

প্রতারণা প্রসঙ্গে পুলিশ জানায়, পাত্র চেয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন গ্রেপ্তার হওয়া শামীমা রহমান। বিজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করেন, কানাডার প্রবাসী ধনাঢ্য নারীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই। পাত্র বিবাহিত ও তার সন্তান থাকলেও কোনো সমস্যা নাই। ওই বিজ্ঞাপন দেখে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে প্রতারকরা একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে সিভি পাঠাতে বলেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সিভি পাঠালে তার সিভিতে দেয়া ফোন নম্বরে ফোন করেন প্রতারক শামীমা রহমান। কখনো তার সহযোগী নুরুল আলম ফোনে কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা করে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিয়ের আলোচনা হয়। ওই দিনই তাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। প্রতারকেরা তখন তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে বলে জানায় এবং ভুক্তভোগীকে পাসপোর্ট করতে বলেন।

সেই সঙ্গে তারা জানান, কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং, টিকিট, বিয়ের খরচ ও গয়না খরচ দিতে হবে। কথা অনুযায়ী ভুক্তভোগী সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ও তার আগের বউয়ের দেড় ভরি স্বর্ণালংকার দেন। এরপর ভিকটিমের বাসায় গত ২০শে মে শাড়ি, গয়না পরে প্রতারক নারী বউ সেজে ভুক্তভোগীকে বিয়েও করেন। এদিকে কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রতারক নারী তাকে কাগজপত্র দিয়ে গত ২৯শে মে ফ্লাইটের কথা জানান। কিন্তু তার দুই দিন আগে ২৭শে মে থেকে প্রতারক শামীমা তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী আজিজের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী দেখাটা বাবা-মা বা পারিবারিক পর্যায়ে হওয়াটা ভালো। পরিবারের বাইরে অন্য কারোর সাহায্য নিতে পারেন যে কেউ। কিন্তু সহযোগিতার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ নেয়া অথবা প্রতারণা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ডিসি তারেক বিন রশিদ বলেন, পাত্র-পাত্রী খোঁজার নামে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়টি প্রায়ই ঘটে থাকে।

Advertisement

অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো ভালো কাজ করছে। পাত্র-পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্রে পরিবারনির্ভর বা পারিবারিকভাবে চেনা-জানা হলে ঝুঁকি কম থাকে। তিনি বলেন, বিদেশি পাত্র-পাত্রীর নামে প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটে। বিস্তারিত না জেনে ১ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা ঠিক নয়।