Advertisement
উমায়েরের বাবা ইউসুফ রায়হান বলেন, এত বিকট শব্দ, একেকটা পটকা ফুটছিল অনেক জোরেশোরে। তখন ভয়ে শিশুটি কাঁপছিল। কিছুক্ষণ পরপর ওর শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল। আমি তাকে রেগুসাইজ করছিলাম। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন যে, ও (শিশু) হার্ট ফেল করেছে। পরে মারা গেল। যার সন্তান চলে যায়, সেই বোঝে যে আসলে সন্তান কি জিনিস ছিল। কখনো এটা ভুলতে পারবো না।
শহরে আবারও কড়া নাড়ছে থার্টিফার্স্ট নাইট। তাই এলোপাতাড়ি ফানুসের আগুন আর আতশবাজির প্রকাণ্ড শব্দের আতঙ্কে উমায়ের বাবার মতো অনেকেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২২ এ নতুন বছর উদযাপনকে কেন্দ্র করে ফানুস থেকে আগুন লেগেছিল ঢাকার মাতুয়াইলসহ ১০টি স্থানে। গোটা দেশে যা শতাধিক। আতশবাজির প্রকট শব্দে নীড় ছেড়ে পালিয়ে যায় পাখিরাও। এছাড়া গেল বছর মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ফানুস আটকে যাওয়ায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল।
Advertisement
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই ফানুসটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং আতশবাজি একটা সহনীয় মাত্রায় আনতে হবে। যেন বিকট শব্দ তৈরি না করে। এখান থেকে তাপ এবং আলোর মাধ্যমে অন্য কোথাও অগ্নিসংযোগ যেন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তরুণ আইনজীবী মিজানুর রহমান। বেআইনি আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর ওপর নিয়ন্ত্রণ চেয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে রিট করেছিলেন হাইকোর্টে। বাড়িওয়ালা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন নির্দেশনাও। কিন্তু জনস্বার্থে করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছিলেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, বিস্ফোরক আইনের তফসিলে বলাই আছে যে, লাইসেন্সধারী ছাড়া অন্য কেউ বিক্রি করতে পারবে না। হ্যাপি নিউ ইয়ারের বিষয়টা হলো যারা লাইসেন্সধারী না তারা বিস্ফোরক বিক্রি করছে। এটা অনেক বড় একটা ক্ষতির কারণ। তারা কীভাবে এই বিস্ফোরক উপাদান বিক্রি করতে পারছে?
থার্টিফাস্ট নাইটে ঢাকার বায়ু ও শব্দের মান পর্যবেক্ষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে আতশবাজির কারণে শব্দের মাত্রা ছিল গড়ে ৯০ থেকে ১১০ ডেসিবল। অথচ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ৭০ ডেসিবল।
Advertisement
অবশ্য, নতুন বছর উদযাপনকে ঘিরে এবার কঠোর অবস্থানে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনন্সের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, যারা আইনকে ফাঁকি দিয়ে এই বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যেসব বাড়ির ছাদে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, সেসব ছাদগুলোকে আপনারা বন্ধ করে দেন এই রাতের (থার্টিফাস্ট নাইট) জন্য। আমরা যে নির্দেশনা দিয়েছি, তা না মানলে আমরা ওই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।