সোহেল চৌধুরী হত্যার ২৫ বছর: যে কারণে বিচারে ধীরগতি (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি ,সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ : বাংলা সিনেমার সোনালী যুগের যে কজন নায়ক দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সোহেল চৌধুরী। কিন্তু ঘাতকরা তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি। অকালেই নিভে যায় তার জীবন। তবে তার অভিনয় অনেকের মনে দাগ কাটে।

Advertisement

রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই নায়ক। ওই ঘটনায় নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর ২৫ বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। এখানে মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, দ্রুত মামলার বিচার শেষ হবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এম আলী আহমেদের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার (১৭ ডিসেম্বর) মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিলো। কিন্তু ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়নি। এজন্য ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন।

জানা যায়, মামলাটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে ১৬ বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এরপর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ থাকে মামলার সব কার্যক্রম। ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট ২১ বছর পর পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়৷

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাক্ষীরা ঠিকমত আদালতে আসলে এতদিনে মামলার রায় হয়ে যেতো। মামলাটি অনেক পুরনো হওয়ায় সাক্ষীদের খুঁজতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মামলার ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত। ইতিমধ্যে দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি, আদালত সব আসামিদের সাজা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করবেন। একটু দেরিতে হলেও ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বিয়ে করে ছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। একপর্যায়ে নেশা ও জুয়ায় ডুবে থাকতেন তিনি। সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই অবসান ঘটে তার জীবনের। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

 

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন-আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২১ বছর পর ওই রুলের নিষ্পত্তি হয়ে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়৷

 

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বনানীর এক ক্লাবে সোহেল চৌধুরী তার বান্ধবীকে নিয়ে গিলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে নায়ক সোহেল চৌধুরী আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেদিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার চেষ্টাও চালান সোহেল চৌধুরী। ঘটনার কিছুদিন পর আসামিরা সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দিন সোহেল চৌধুরী রাত ১টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি ফিরে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী সেলিম আশরাফ বলেন, আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনো কোনো সাক্ষী বোতল চৌধুরীর নাম বলেনি। এমনকি মামলার বাদী তার জবানবন্দিতে এই আসামির নাম বলেননি। আসামি নির্দোষ। তাকে হয়রানি করার জন্য এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।

Advertisement

 

তিনি বলেন, গত ১৩ নভেম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে জামিন দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসাথে এই মামলা ছয় মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন তিনি। আশা করি, রায়ে তিনি খালাস পাবেন।

অন্যান্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মামলাটি দীর্ঘ হওয়ায় আসামিরাও ভুক্তভোগীর স্বীকার। অনেকেই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিও জানান আইনজীবীরা।