রেললাইন কেটে ফেলার আগে যা করেছিলো দুর্বৃত্তরা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুর প্রতিনিধি ,সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ : গেলো বুধবার ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বনখরিয়া এলাকায় আন্তনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে এক নিহত হবার ঘটনা এখনও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল। ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনটি ধীর গতিতে চলার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় বহু মানুষ।

Advertisement

আগের দিন মঙ্গলবার রাতে কোনো একসময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রেলপথের একটি অংশ কেটে রাখে দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তদন্তে নামে পুলিশ।

গাজীপুরে একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ কাল হয়ে দাড়ায় দুর্বত্তদের জন্য। এর সূত্র ধরেই তাদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গাজীপুর শহরের শিমুলতলীর একটি রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ানো একটি মাইক্রোবাস। সেখান থেকে একে একে নেমে আসে বেশ কয়েজনজন লোক।

তারা হোটেলের ভেতরে খাওয়া দাওয়া করে আবার রাত ১১টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলমের দাবি, গাজীপুর সিটি কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার  পরিকল্পনায় রেলপথে নাশকতার ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের চাপ ও দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করতে এই নাশকতার পরিকল্পনা। বিএনপির নেতা আজমলের বাড়িতেই সেই পরিকল্পনা হয়। সেই অনুযায়ী আটজন মিলে রেললাইনের কিছু অংশ কেটে রাখেন।

নাশকতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী সদস্যরা সবাই বিএনপি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতা এবং সক্রিয় সদস্য বলে রোববার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কোনাবাড়ী থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দলটি। তবে ঢাকায় না গিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। পথিমথ্যে তাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন।

Advertisement

এর মধ্যে তাঁরা গাজীপুর সদর থানার জোড় পুকুরপাড় এলাকার ইবনে সিনহা তোহার বাড়ি থেকে রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি এবং দক্ষিণ সালনার ‘বাঁশ বাগান রেস্টুরেন্ট’ থেকে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে নেন। পরে গাজীপুর শহরের ভেতরে বিভিন্ন অলি–গলিতে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে দেয়।

আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বে বনের পাশে মাইক্রোবাস রেখে হেঁটে সরঞ্জমাদি নিয়ে বনখরিয়া রেলসেতুর পাশে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং সুযোগ বুঝে আনুমানিক ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ২০ ফুট রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে চারজনকে নামিয়ে দেন এবং বাকিরা মিরপুরে গিয়ে নামেন। এরপর অন্য একজনের থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে মাইক্রোবাসের ভাড়া পরিশোধ করেন।

এই ভিডিও এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ গত শনিবার জান্নাতুল ইসলাম ও মেহেদী হাসানকে বাসা থেকে আটক করে। তাদের দেয়া তথ্যে বাকি পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা টানা পাঁচবার নির্বাচিত ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূইয়া, জুলকার নাইন আশরাফি,  শাহানুর আলম, সোহেল রানা ও সাইদুল ইসলাম।

পুলিশ জানিয়েছে, জান্নাতুল ও মেহেদী বিএনপির কর্মী। সোহেল রানা গাজীপুরের কাজী আজিম উদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। শাহীনুর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি, হৃদয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাইদুল গাজীপুর সদর থানা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি।

পুরো ঘটনায় জড়িত ৯ জন। ঘটনার নেতৃত্ব দেয়া দুজন পলাতক। তারা হলেন, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম ও শহরের আজিমুদ্দিন কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ত্বোহা। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা কাউন্সিলর আজমল ভূইয়া।

Advertisement

পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নাশকতার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।