ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),যশোরে প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ : মো. হাদিউজ্জামান উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমে দেন ওষুধের দোকান। এরপর চিকিৎসকের সহযোগী হয়ে একটি সার্জিকেল ক্লিনিকে কাজ করতে করতে শিখে নেন অপারেশনের কাজ। কাজ শিখে টাকা আয় করতে গিয়ে নিজেই বনে যান চিকিৎসক। চিকিৎসা বিদ্যার কোনো সনদ না থাকলেও গত ১২ বছরে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেন পাঁচ শতাধিক মানুষকে। এতে তার আয় হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। আর এ টাকা দিয়ে করেছেন দুই তলা ও তিন তলা দুটি বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ। কিনেছেন গাড়িও।
Advertisement
মো. হাদিউজ্জামানের বাড়ি যশোরে। এইচএসসি পাশ করে ওষুধের দোকান দিয়ে বসেন। ওষুধ বিক্রি করতে করতেই পরিচয় হয় চিকিৎসকদের সঙ্গে। ২০১১ সালের দিকে যশোরের ফুলতলায় তিনি ফুলতলা সার্জিকেল ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন। ক্লিনিকটিতে ডা. গৌরাঙ্গ, ডা. মোর্শেদ ও ডা. জীন্দ্রনাথের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
ডা. গৌরাঙ্গের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করা চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তার কাছ থেকে শেখেন অপারেশনের কাজ। এ কাজ শিখেই পরে নিজেই বনে যান চিকিৎসক। অথচ গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবেও তার কোনো সনদপত্র নেই।
২০১২ সালে ফুলতলা সার্জিকেল ক্লিনিকটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে রোম-আমেরিকান নামক একটি হাসপাতালে শুরু করেন তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরের কাজ। তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরের জন্য তৃতীয় লিঙ্গের ও তাদের গুরু মা’দের মাধ্যমে চিকিৎসক হাদির কাছে আসা মানুষকে প্রথমে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বলতেন। এরপর অপারেশন করে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেন। সাধারণ রোগীদের মতোই অজ্ঞান করে কেটে ফেলেন পুরুষাঙ্গ। তারপর বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল ইনজেকশন দিয়ে শারীরিক পরিবর্তন করান। ধীরে ধীরে তার মধ্যে আসতে থাকে পরিবর্তন। কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতোই মানসিক ও দৈহিক পরিবর্তন হয়। দৈহিক রূপ দিতে দারকি (ইমপ্লান্ড) দিয়ে বক্ষ ফোলানোর কাজ করেন।
প্রায় ১২ বছর ধরে হাদিউজ্জামান হিজড়ায় রূপান্তরের কাজ করেন। এ কাজ করতে তিনি লিঙ্গের অপারেশনের জন্য নেন ৩০ হাজার টাকা করে। আর সিলিকন ঝেল দিয়ে বক্ষের আকার পরিবর্তন করতে প্রতি জনের কাছ থেকে নেন ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে।
গত ১২ বছরে তিনি প্রায় ৫০০ জনের বেশি মানুষকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে রূপান্তর করেছেন। বক্ষের আকার পরিবর্তন করেছেন ২৫০ জনের বেশি। আর এতে তার আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে তিনি করেছেন দুটি দুই তলা বাড়ি। কিনেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা দামের গাড়িও। গাড়িটি কখনো চালক চালান, কখনো নিজেই চালিয়ে বিভিন্ন স্থানে যান।
Advertisement
ভুয়া চিকিৎসক হাদির রয়েছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। প্রথম স্ত্রী থাকেন খুলনার ফুলতলায়, আর দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন যশোরের অভয়নগর এলাকায়। গত ৭ নভেম্বর যশোর সদর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। গত ২৬ অক্টোবর থেকে পিবিআইয়ের গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকার ১৩ দিন পর নানা চেষ্টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পরই ঢাকায় গুলশানের নিকেতনে তারই গড়ে তোলা একটি সেন্টার থেকে রাশেদ আহম্মেদ নাছিম খান নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা পিবিআই। সেন্টারটিতে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করার নানা জিনিসপত্র আলামত হিসেবে পায় পুলিশ। সেগুলো জব্দ করে সেন্টারটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভুয়া চিকিৎসক হাদিউজ্জামান ও রাশেদ আহম্মেদ নাছিম খানের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও প্রতিরোধ আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনে ঢাকার ধামরাই থানায় মামলা করা হয়েছে। এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন হাদি। ছয় মাস জেলে থেকে আবার শুরু করেন একই কাজ।
এবার ধামরায় থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা ওষুধ ও মালামাল জব্দ করেছে পুলিশ। আর গ্রেফতারের পর গত ১২ নভেম্বর তার এসব অপকর্মের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মো. হাদিউজ্জামান।
Advertisement
ভুয়া ডাক্তার হয়ে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা জাগো নিউজকে বলেন, ভুয়া চিকিৎসক হাদিউজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হাদি যশোরে তার ক্লিনিকে পাঁচ শতাধিক মানুষকে অপারেশন করে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য করেছেন। অথচ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। একজন চিকিৎসকের কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করে তারপর থেকে নিজেই অপারেশন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি এ ধরনের অপারেশন করতেন।