মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীকে হারাতে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুর প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।

Advertisement

এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আসনান সরকার রাসেল।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার একদিনের মাথায় সোমবার (২৭ নভেম্বর) গাজীপুর-১ আসন থেকে মোট ছয় জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুল আহসান সরকার রাসেলও রয়েছেন। এছাড়াও রেজাউল করিম রাসেল মনোনয়ন জমা দেয়ার জন্য ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই তিনজনই বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

গাজীপুর-১ আসনটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর মহানগরীর ১ থেকে ১৮নং ওয়ার্ড এলাকা নিয়ে গঠিত। আসনটি আগে শ্রীপুরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে শ্রীপুর থেকে আলাদা করে গাজীপুর মহানগরীর কিছু অংশ নিয়ে আসনটি গঠিত হয়। তারপর গত ৩টি নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে।

আ ক ম মোজাম্মেলক হক ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে গাজীপুর পৌরসভায় টানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন। ২০০৮ সালে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি টানা ৩ বার জয় লাভ করেন। এখানে জনপ্রিতায় এগিয়ে আছেন আ ক ম মোজাম্মেলক হক। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ টানা ৪৫ বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সাথে মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছেন।

Advertisement


আ ক ম মোজাম্মেলক হক ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুর থেকে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন।
তার অনুসারীরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। এলাকায় মানুষ শান্তিতে রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক হানাহানি নেই। তিনি এলাকায় প্রচুর সময় দিয়ে থাকেন। এসব বিবেচনা নিয়ে এবারেও মানুষ তাকে ভোট দিয়ে আবারো নির্বাচিত করবেন।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মো. রেজাউল করিম রাসেল। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান হন। কিন্তু ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়। পরে ২০২০ সালে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। সবশেষ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০২১ সালে কালিয়াকৈর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি নেতার কাছে পরাজিত হন।

রেজাউল করিম রাসেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো নিষেধ করেননি বরং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হন, তার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনটি যাতে অংশগ্রহণমূলক এবং ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহ বোধ করেন, সে জন্য আমি এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেব। এজন্য আমি ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি।’

গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আসনান সরকার রাসেল বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করছি। তারপর মনোনয়ন জমা দিব কিনা সিদ্ধান্ত নেব।

Advertisement


গাজীপুর-১ আসনে আরও যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন,তারা হলেন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী (বিএনপি নেতা তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে) চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মো. সফিকুল ইসলাম এবং গণফ্রন্টের জেলা কমিটির সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এইচএম কামরুল হাসান আরও জানান, গাজীপুর-১ আসনটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা অর্থাৎ গাজীপুর মহানগরীর বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৪ এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৮। এ আসনের কালিয়াকৈর উপজেলা এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৭ জন এবং গাজীপুর মহানগরী এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন। ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ২৩৭টি, বুথ সংখ্যা হলো ১৫১২টি। এখন পর্যন্ত গাজীপুরের ৫ টি আসনে ২১ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।