তফসিল ঘোষণা, কোন পথে বিএনপি?(ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩ : বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি যখন রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও করছে; তখন ঘোষণা হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এ অবস্থায় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অনড় দলটির নেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার ফলে দেশের রাজনীতি আরও সংঘাতের দিকে যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Advertisement

বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের কথা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

পাশাপাশি বিএনপির সমমনা দলের পক্ষ থেকে দুই দিনের হরতাল কর্মসূচিরও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর সমমনা দলগুলো হরতাল পালন করবে। এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) পৃথকভাবে সকাল-সন্ধ্যা ও আধাবেলা হরতাল পালন করবে।

কোন পথে বিএনপি

 

নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ দাবি করে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতা নেই বর্তমান ইসির। সরকারের সঙ্গে মিলে তারা একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করছে। এর ফলে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে তার দায় ইসিকেই নিতে হবে।
 
দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। সে জন্য নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচনকালীন সরকারের ফয়সালার পর তফসিল ঘোষণা করা। যেখানে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাই ঠিক হয়নি, সেখানে তফসিল ঘোষণা মানে নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। সেটা দেশের জন্য শুভকর হবে না।’
 
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো লাভ হবে না দাবি করে বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘অওয়ামী লীগ জনগণে বিশ্বাস করো না, ভোটে বিশ্বাস করে না, রাজনৈতিক দলে বিশ্বাস করে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সংলাপ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘অতীতেও দেখা গেছে তফসিল ঘোষণার পর তা বাতিল হয়েছে। আর কার সঙ্গে আমরা সংলাপ করব? বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতা কারাগারে। বিএনপির মহাসচিব জেলখানায়, মির্জা আব্বাস জেলখানায়, নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে; এ অবস্থায় কার সঙ্গে কীভাবে সংলাপ হবে এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
  

হালে পানি পায়নি বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু

 

২০১৩ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে রাজপথে জ্বালাও-পোড়াওসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির এ দাবি হালে পানি পায়নি। এরপর দেশে-বিদেশে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে তত্ত্বাবধায়কসহ নানা ইস্যু সামনে এনে অপরাজনীতির চেষ্টা চালায় বিএনপি। তবে সে সবেও কোনো কাজ হয়নি।
 
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ধরা খেয়ে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যায় বিএনপি। তবে সে নির্বাচনেও তাদের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনের সকাল থেকে বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন ভালো হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে বলে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভরাডুবি হলে তারা কারচুপিসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায়। যদিও বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ চাওয়া হলেও তা তারা দিতে পারেনি।
  

বিএনপির ডাকা অবরোধের মধ্যে বাংলামোটরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। 

 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে শুধু আলোচনায় এসেছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। আমরা সে নির্বাচনই উপহার দিতে কাজ করছি। কেউ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কথা বলেননি।

Advertisement

 
সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
  

নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি

 

বিএনপি কখনও আদর্শিক দল নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তার মতে, দলটিতে কোনো নেতা নেই।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিকল্প তারেক রহমান হতে পারেন না। তবু ড. মঈন খান ও ড. মোশাররফ হোসেনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষকরা তারেক রহমানকে ‘স্যার স্যার’ বলে ডাকেন। আমার এটা বোধগম্য নয়, এই রাজনীতি না করলে কী হবে?’’
 
তার মতে, নেতৃত্বের অভাববোধ ও আদর্শিক অবস্থান না থাকায় বিএনপি আসলে ভেতর থেকে ধসে যাচ্ছে।
 
তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি হরতাল অবরোধের পর আর কী দেবে? তাদের এখন রাস্তায় যুদ্ধ করতে হবে। তারাতো এখন মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আমার ধারণা, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে, আর না গেলে তাদের দলটি ভেঙে যাবে। একবার ভাঙলে দল আর জোড়া লাগবে না।
  

হরতাল-অবরোধে মিলবে কি সমাধান?

 

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়া এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে বিএনপি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।  
 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের বয়স বর্তমানে ৭৪ বছর। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে খারাপ সময়েও নির্বাচনে গেছে। এমনকি ১৯৭৯ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন নির্বাচন করেছে, যখন সব দলকে নতুন করে নিবন্ধন করতে হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ কিন্তু গোঁ ধরেনি। নিবন্ধন করে নির্বাচনে গিয়েছিল।
 
তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন পেয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ একটি প্রতীকী সংসদ অধিবেশন করেছিল, সংসদ ভবনের উত্তর দিকে। তাতে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মালেক। শত বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেও আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে দূরে থাকেনি।
 
‘কিন্তু বিএনপি এটা করছে, যেহেতু দলটির কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, এটা বলতেই পারেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা আর রাজনৈতিক দল হওয়া এক কথা না। বাংলাদেশের অনেক ছোটো ছোটো রাজনৈতিক দল আছে, যাদের আদর্শ আছে। যদিও তারা কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তবে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই,’ বলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
তফসিল ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের জন্য বাধ্যতামূলক জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সংবিধান অনুসারে এটা করতেই হবে। এখানে পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
 
আর বিএনপির আন্দোলন করার কিছু নেই বলেও মনে করেন তিনি। এই সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, তাদের আন্দোলন করার একটা সময় ছিল। আমি মনে করি, এখন শর্তহীন সংলাপে যেতে চাইছে দলটি। কিন্তু তখনই তারা সংলাপের কথা বলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছে। আমার প্রশ্ন, লু কী বিএনপির নীতিনির্ধারক?
  

অবরোধের মধ্যে আগুনে পুড়েছে বিআরটিসির বাস। 

 

‘বহু আগে থেকেই সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, শর্তহীনভাবে এলে আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি। বিএনপির উচিত ছিল, এই সুযোগটা লুফে নেয়া। কিন্তু দলটি একের পর এক নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রপতির সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা এতগুলো ‘না-তে’ থাকে, তারা তো নিজেদের আন্দোলন সফল করতে পারবে না,’ বলেন কুদ্দুস আফ্রাদ।
 
তিনি বলেন, বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না বলে জনগণের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। কারণ দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো নেতা নেই, যারা নির্দেশনা দেবে। আবার সামনেও তারা ব্যর্থ হবে। বাইরের একটি দেশের ওপর নির্ভর করে তো কোনো রাজনৈতিক দল সফল হতে পারে না।
 
সিনিয়র এ সাংবাদিকের মতে, বাইরের দেশতো আর বিএনপির স্বার্থ দেখবে না, তারা নিজেদের স্বার্থ দেখবে। বিএনপি এসব কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের পেশিশক্তি দেখাতে চেয়েছে। তারা এখন ফ্যাসিস্ট কায়দায় কর্মসূচি দিয়েছে বলে মনে করে জনগণ।
 
বিএনপি বহু আগে থেকেই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলেও জনগণ তাতে সাড়া দেবে না বলে জানান কুদ্দুস আফ্রাদ। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, কারণ দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আর জনগণ, ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থ দেখবে। যে কারণে বিএনপি কোনোভাবেই হলতাল-অবরোধ দিয়ে সফল হবে না।
আর বিএনপি যে দেশের ঘাড়ে চড়ে এসব কর্মসূচি দিচ্ছে, তারাও ব্যর্থ হবে বলে জানান তিনি।
  

সব দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান সিইসির

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
 
তিনি বলেছেন, ভোটে কারচুপি হলে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।

Advertisement

 
সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অবরোধ-হরতালে সমাধান চায় বিএনপি। ফাইল ছবি