এক টাকা দেনমোহরে গণমাধ্যমকর্মীর বিয়ে!

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পঞ্চগড়,রোববার,১২ নভেম্বর ২০২৩ : বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন; যার মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা হয়। আর এই বিয়েকে নিয়ে দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে কনের ইচ্ছায় এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন রনি মিয়াজী নামে এক গণমাধ্যমকর্মী।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দিনগত রাতে উভয় পরিবারের সম্মতিতে এক টাকার দেনমোহরে কাবিন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখানে আয়োজিত হয় বিয়ে–পরবর্তী ভোজের।

Advertisement


গণমাধ্যমকর্মী রনি মিয়াজীর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা দেবনগড় ইউনিয়নের ভজনপুর বাসামোড় এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে যমুনা টেলিভিশন ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী কাজ করে আসছেন। 

এছাড়াও তরুণ সমাজকে যৌতুকসহ সমাজের সব অবক্ষয় রোধে পাঠ ও লাল কার্ড দেখিয়েও সচেতন করেছেন। তাই সমাজের মানুষকে সচেতন ও অনুপ্রাণিত করতে তিনি যৌতুকবিহীন বিয়ে করেন।

কনে ফাতেমা তুজ জহুরা একই উপজেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের আজিজ নগর এলাকার ফরহাদ হোসেনের মেয়ে। তিনি বর্তমানে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল এন্ড হাসপাতাল থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং শেষ করে বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
এ বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, তিনি যেহেতু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাই তার বিয়ের কাবিনে দেনমোহর ধরা হবে এক টাকা। পরে কনের পরিবারের সব সদস্যের সম্মতিতে এক টাকা দেনমহরে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

Advertisement


সাংবাদিক রনি মিয়াজী সময় সংবাদকে বলেন, সামাজিক ও মানবিক কাজ করা থেকেই আমার সাংবাদিকতা শুরু। আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অনেক নারীকে শুধু যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে নির্যাতন ও জীবন যেতে দেখেছি। পাশাপাশি আমি যৌতুকসহ সামাজিক অবক্ষয় রোধে একসময়ে শিক্ষার্থীদের শপথসহ লাল কার্ড দেখিয়ে সচেতন করেছি। তাই ইচ্ছে ছিল আমি বিয়ে করলে যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করবো। আমরা মানুষকে সচেতন ও অনুপ্রাণিত করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করি।
একই কথা বলেন নববধূ ফাতেমা তুজ জহুরা। তিনি বলেন, সমাজে দেনমোহর কম বেশি দেয়া নিয়ে ইদানিং বর-কনে পক্ষে অনেক রকমের কথা হয়। পাশাপাশি সমাজে নারীরা আজ যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। অনেক নারী জীবনও দিয়েছে। আমরা দুজনে যেহেতু মানুষের সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তাই খুব কাছে থেকে এমন করুণ দৃশ্য দেখেছি। ফলে আমরা দুজনে এমন উদ্যোগ নিয়েছি।

বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা এখন টেলিভিশনের পঞ্চগড় প্রতিনিধি লুৎফর রহমান সময় সংবাদকে জানান, সাধারণত দেখা যায় কনেপক্ষই দর-কষাকষি করে কাবিনের সময় দেনমোহর বাড়িয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা।

Advertisement


সময় টেলিভিশনের পঞ্চগড় প্রতিনিধি সোহাগ হায়দার জানান, বিয়ের দেনমোহর নিয়ে নানা ঘটনার প্রত্যক্ষ করেছি। তবে এই বিয়ে পুরোই ব্যতিক্রম। আর্থিকভাবে সচ্ছল এক নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষার দৃষ্টান্ত এই বিয়ে।

এ বিষয়ে বরের বাবা আনিছুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে হলো। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেলের বউকে ঘরে তুলবো। তাদের জন্য দোয়া চাই, তারা যেন সুখী হয়।