ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নড়াইল প্রতিনিধি,শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩ : খালে অথবা বিলের পানিতে কেউ মাছ ধরছেন, আবার কেউ গবাদি পশুর জন্য খাবার সংগ্রহ করছেন, কেউবা হাঁসের জন্য শামুক অথবা নিজেদের খাবারের জন্য শাপলা সংগ্রহ করছেন-নড়াইল জেলায় এ রকম অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের বাহন তালের নৌকা। স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘ডুঙ্গা’।
Advertisement
নড়াইল জেলার বিল পাড়ের হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকার বাহন এই ‘ডুঙ্গা’। তাল গাছের তৈরি এসব ‘ডুঙ্গা’ পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যবহার করছেন।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকালে নড়াইল সদর উপজেলার হাতিয়াড়া গ্রামের আরতি বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানালেন, বিলের মাঝে ডুঙ্গায় বসে বড়শি দিয়ে দেশি প্রজাতির পুঁটি আর বড় বড় টাকি মাছ পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, বিকালে বাড়ি ফেরার পথে কলমি শাক, শাপলা আর গরুর জন্য ঘাস তুলে আনবেন। জানান-এ বছর বিলে পানি কম হওয়ায় নৌকার থেকে খালে-বিলে ডুঙ্গার চলাচল বেশি।
Advertisement
কালনা-নড়াইল-যশোর মহাসড়কের পাশের তুলারামপুর হাটটি এ অঞ্চলে ‘ডুঙ্গা’ বিক্রির বড় হাট। এখানে সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার হাট বসে। হাটে ছোট একটি ডুঙ্গার দাম দুই হাজার টাকা আর মাঝারি থেকে বড়টি ৬/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে তুলারামপুর হাটে ডুঙ্গা কিনতে আসেন কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
যশোরের অভয়নগর থেকে ‘ডুঙ্গা’ কিনতে আসা তাহির কাজী বলেন, বড় সাইজের একটি ‘ডুঙ্গা’ ৬ হাজার টাকায় কিনেছি। মাছের ঘেরে খাবার দিতে ডুঙ্গার প্রয়োজন হয়। গত বছরের তুলনায় এবার কম দামে ‘ডুঙ্গা’ কিনেছি ।
চর শালিখা গ্রামের ‘ডুঙ্গা’ বিক্রেতা সেলিম মোল্যা বলেন, এ বছর বিলে পানি কম হওয়ায় ডুঙ্গার চাহিদা কম। গত বছর যে ডুঙ্গা বিক্রি করেছি চার হাজার টাকা। এ বছর সেটি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
Advertisement
উল্লেখ্য, একটি তালগাছ থেকে মাত্র দুটি ডুঙ্গা তৈরি করা যায়।
নড়াইল বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. আব্দুস ছালাম খান বলেন, দেশীয় প্রযুক্তির এ বাহন লোক সংস্কৃতির অংশ। জেলায় অধিক সংখ্যায় মাছের ঘের হওয়ায় বিলের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে, ফলে ধীরে ধীরে ডুঙ্গার ব্যবহারও কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে খাল-বিলে পানি প্রবাহ বাড়াতে হবে এবং ডুঙ্গা তৈরির কারিগরদের সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে।