ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুর প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩ : ১৯৯১ সাল থেকেই গাজীপুর-১ আসন আওয়ামী লীগের দখলে। এবারও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কারণে বেশিরভাগ ভোটার নৌকার পক্ষে। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের মত, দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলে প্রচণ্ড বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এই তথ্য স্বীকার করেন না। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ভোট হলে নৌকার জয় নিশ্চিত।
Advertisement
এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা জানান, নির্যাতনের কারণে তারা মাঠে নামতে পারেন না। কিন্তু ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তারা মনে করেন, নিরপেক্ষ ভোট হলে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ভালো করতে পারে। তাদের পক্ষে এলাকাবাসীর নীরব সমর্থন আছে বলেও দাবি করেন তারা।
শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান আর বিস্তৃত বনাঞ্চল ও উঁচু-নিচু ভূমি দিয়ে ঘেরা বিপুল সম্ভাবনার কালিয়াকৈরের রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন জেলা শহর। মনে হবে রাজধানীরই অংশ। এত সব উন্নয়ন অর্জন যে কালিয়াকৈরে, সেখানে সংকট আছে রাজনীতি নিয়ে, ক্ষমতাসীন দলে বিরোধ প্রবল।
গাজীপুর-১ সংসদীয় আসনটি কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৯৪ তম আসন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
কয়েকজন জন সরকার দলীয় নেতারা জানান, এই আসনে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা অন্য যে কারো চেয়ে ভালো। তবে দলের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। নির্বাচনের আগে এই বিভেদ না মিটলে বিপদ হবে। দলের কর্মীদের এমন অভিযোগ স্বীকার করেননি বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি দাবি করেন, তার সাংগঠনিক কৌশলকে কর্মীদের অনেকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।
Advertisement
Advertisement
গাজীপুর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। মোজাম্মেল হকের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে নৌকার মাঝি হতে আগ্রহ আছে আর কয়েকজনের।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন নেতৃত্বের বাইরে থাকলেও গেলো প্রায় ১৫ বছর এই এলাকার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের নেতৃত্বে এই এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা এখন অনেক দৃশ্যমান। তবে দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে অভাব নেই অভিযোগ অনুযোগের, দলের পক্ষে প্রার্থী হতে চান বেশ কয়েকজন।
অন্যদিকে, স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এলাকায় কোণঠাসা। তবে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়ে বললেন, এখন সময় এসেছে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার। নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হলে তখন দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, তার ছেলে চৌধুরী ইশরাক আহমদ সিদ্দিকী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল । এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হেলালও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
গাজীপুর-১ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন ছাড়া কোনো নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ইতিহাস নেই। ২০০৮ সালের আগে কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের রহমত আলী বিজয়ী হন।
Advertisement
২০০৮ সালে নতুন সীমানা নির্ধারণ হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের টিকেটে বিজয়ী হন বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের এই আসনে আওয়ামী লীগই ফেবারিট বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।