আগস্টেও সারওয়ার্দীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন আরাফি!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বুধবার, ০১ নভেম্বর ২০২৩ : অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসাবে দাবি করা মিয়ান আরাফি ওরফে জাহিদুল ইসলাম বেল্লালের গাঁটছড়া যে পুরোনো তা আবারো প্রমাণিত হলো।

Advertisement

এই জুটিকে গেলো আগস্ট মাসেও একসঙ্গে রাজধানীর গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে গোপন বৈঠক করতে দেখা গেছে। অথচ ভুয়া পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর বিতর্ক শুরু হলে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি তারা একে অপরকে বেশিদিন ধরে চেনেন না বলে দাবি করে দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন।

শনিবার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু সমাবেশ শুরুর আগেই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে দল দুটির নেতা-কর্মীরা।

প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করা এক পুলিশ সদস্যকে। আগুন দেয়া হয় অর্ধশতাধিক গাড়িতে। হামলা চালানো হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় ২৮ সাংবাদিক ও ৪১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের জেরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে দলের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরাফি। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে।

মিয়ান আরাফির ইংরেজিতে সংবাদ সম্মেলনের সময় তার দুই পাশে বসা ছিলেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এক ভিডিওতে দেখা যায়, আরাফি সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভীর সঙ্গেও আলাপ করছেন।

Advertisement

জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে আরাফির ওরফে বেল্লালের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে তড়িঘড়ি করে বিবৃতি দেয় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকেও কোনো প্রতিনিধি বিএনপি কার্যালয়ে যাননি।

বিএনপিও তাড়াতাড়ি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা ওই ব্যক্তির সম্পর্কে বিএনপির কাছে কোনো তথ্য নেই। নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে দেয়ার তার বক্তব্যের দায় ও বিএনপি নেবে না বলে সোজা জানিয়ে দেয়া হয় ওই বিবৃতিতে।

এরপরই প্রশ্ন আসতে শুরু করে তাহলে কে ওই আরাফি? কীভাবেই তিনি বিএনপি কার্যালয়ে এলেন? কারা তাকে নিয়ে নিয়ে এসেছেন?

ঘটনার পরদিন রোববার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরাফি ওরফে বেল্লালকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে তুলে দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।

এরপর স্যোশাল মিডিয়াতে মিয়ান আরাফির এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে বাংলায় দেয়া বক্তৃতায় আরাফি বলেন, তিনি ঘটনার কিছুই জানতেন না। তার সঙ্গে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর পরিচয় ছিলো। সারওয়ার্দীই তাকে এসব বলার জন্য শিখিয়ে পল্টনে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আরাফির কথার যুক্তি খণ্ডন করে হাসান সারওয়ার্দীরও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আরাফির সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের কথা অস্বীকার করে সারওয়ার্দী দাবি করেন, আরাফিই তাকে ফোন করে বিএনপি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে বলেন।

তবে দু’জনের বক্তব্য যে সঠিক নয়, তা একটি ছবি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। গত ২২ আগস্ট আমেরিকান ক্লাবে গোপন বৈঠক করেন আরাফি ও সারওয়ার্দী। ছবিতে দুজনকে একসঙ্গে আমেরিকান ক্লাবে প্রবেশ করে দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

রোববার আরাফির গ্রেপ্তারের দিনই আরাফি, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাসভঙ্গের’ মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার। সোমবার আরাফিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার সাভার থেকে গ্রেপ্তার হন হাসান সারওয়ার্দী। বুধবার সকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।