ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ : আজ ২৮ অক্টোবর। নয়াপল্টন থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটক । এই দুইটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। একই সময়ে এই দুই স্থানেই সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আর মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ বলছে, শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। আর বিএনপি বলছে, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ।
Advertisement
এরিমধ্যে দুই দলকে এই দুই স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে ২৮ শর্ত। তবে এরিমধ্যে এই দুই সমাবেশকে ঘিরে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। অন্যদিকে কি হতে হতে যাচ্ছে, ভেবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় জনগণ। আর, পরিস্থিতি বিবেচনায় সতর্ক অবস্থানে পুলিশ।
২৮ অক্টোবর দিনটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আতঙ্কের, কারণ ২০০৬ সালের এই দিনেই, একই ধরনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো ব্যাপক সহিংসতা। জ্বালাও পোড়াও আর হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মানুষকে। তাই জনমনে আশঙ্কা-উদ্বেগ তাহলে কি তেমনি আরেকটি দিন আসন্ন?
রাজধানীতে প্রধান দুই বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক সমাবেশের দিন কোনো সংঘাত-সহিংসতা হলে, নিজেরা নিরাপদ থাকতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তাও নগরবাসীর মধ্যে ঘুম হারাম। চারিদিকে একটা থমথমে ভাব। শহরজুড়ে তল্লাশি অভিযান, মহাসড়কও বাদ পড়ছে না। বাড়তি সতর্কতায় পুলিশ।
উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার পাশাপাশি কেউ কেউ আশাবাদের কথাও শোনাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে দুই দলেরই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়েছে অনেকগুলো। দেড় কিলোমিটারের মধ্যে দুই পক্ষই শান্তিপূর্ণ জমায়েত করার পর প্রশংসা করেছেন বিদেশিরাও। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে সহনশীল রাজনীতি কথা।
Advertisement
তবে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগের কারণ ১৭ বছর আগের এই দিনটির স্মৃতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘিরে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু, ঝরে প্রান। এক পর্যায়ে জারি হয় জরুরি অবস্থা।
সেই একই ইস্যু নিয়ে শনিবার এই তিন দলের সমাবেশে ঘিরে রাজনীতিতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনমনে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগরে মানুষের চলাচলও অনেক কমে গেছে। গণপরিবহন ও যানবাহনের সংখ্যাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
বিএনপি বলছে, ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করবে তারা। তবে হামলা হলে প্রতিরোধের কথাও বলা হয়েছে। অন্যদিকে, জননিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাজধানীর সব পাড়া-মহল্লার মোড়ে নেতা কর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে বলেছে ক্ষমতাসীন নেতারা। নাশকতা প্রতিরোধের ঢাক দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে একটি বার্তা দিতে চাই। চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায় করতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। মহাসমাবেশ বাধা দিলে দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ভেতরে এখন ক্ষমতার ক্ষুধা। ক্ষুধার আগুন মেটাতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বিএনপি ও তাদের দোসররা। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে সবাইকে এক হয়ে অপশক্তিকে হারাতে হবে, মাঠে থাকতে হবে। রাজপথে থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো একইদিন সমাবেশের ঘোষণা দেয় মায়াতে ইসলামী। মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে চায় দলটি। মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে চিঠিও দিলেও দলটিকে বলা হয়, কোনোভাবেই জামায়াতকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
দুই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। এ জন্য শুক্রবার বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে র্যাব। পুলিশ বলেছে, সমাবেশ ঘিরে তারা এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা অনুভব করছেন না।
তবে সবকিছু বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ যদি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার হুমকির সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীতে র্যাবের দেড় হাজারের অধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও।
গোয়েন্দা নজরদারির জন্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পল্টনের আশপাশে ৬০টির বেশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে ডিএমপি। শনিবার সমাবেশের দিন ড্রোন উড়াবে পুলিশ। ডিএমপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হবে।
Advertisement