ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুরের মাওনা প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩ : পরিবারের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে অভিমানে গোপনে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আরিফা। স্বামীর সংসারেই থাকবেন না। কাজ করবেন পোশাক কারখানায়। চলবেন নিজের আয়ে। কিন্তু গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় বাস থেকে পাচারচক্রের এক নারী সদস্যের ফাঁদে পড়েন। তাকে পোশাক কারখানায় চাকরির প্রলোভন দিয়ে নিয়ে যায় বাড়িতে। পরে জর্ডানে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। শুরু হয় পাসপোর্ট প্রক্রিয়া।
Advertisement
এর মাঝেই ফাঁদ পেতে আরিফাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বেঁচে গেলেন জর্ডানে পাঁচার হওয়া থেকে। বলছেন, এমন ভুল আর করবেন না। আরিফার বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ঝুনকারচরে।
জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন আরিফা। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে গত ৫ অক্টোবর রৌমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বামী বরকত আলী। পরে ১৬ অক্টোবর দুপুরে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের হোতাপাড়া ফুটওভার ব্রিজের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে পাচারচক্রের মাকছুদা বেগমকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জানায়, ঝুনকার চরের বরকত আলী গত ৫ অক্টোবর থানায় একটি জিডি করেন। যাতে উল্লেখ করেন গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার স্ত্রী আরিফা খাতুনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর বিষয়টি তদন্তে নামেন এসআই রাসেল আহম্মেদ। এ অবস্থায় নিখোঁজ আরিফার পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন চেয়ে তথ্য আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ওই সূত্র ধরে হোতাপাড়া থেকে তাকে উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ।
Advertisement
উদ্ধারের পর আরিফা জানায়, অভিমান থেকে বাড়ি ছাড়েন তিনি। কাজ করে বাঁচবেন ভেবে শিশুসন্তান, স্বামী ও পরিবার ছেড়ে ৩০ সেপ্টেম্বর একাই বাসে গিয়ে নামেন গাজীপুরের চৌরাস্তায়। পরিচিত কেউ ছিল না। তাই কোথায় যাবেন ভাবছিলেন। এ সময় এগিয়ে আসেন মাকছুদা বেগম নামে পরিচয় দেয়া এক নারী। পোশাক কারখানায় চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যান তার শ্রীপুরের বাসায়। সেখানেই ছিলেন ১৭ দিন। পরে তাকে জর্ডানে গিয়ে অনেক টাকা-পয়সা রোজগারের লোভ দেখায় মাকছুদা। তার যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চায়। উন্নত জীবনের আশায় তিনি রাজী হন। পরে আরিফার পাসপোর্টের আবেদন করা হয়।
এ অবস্থায় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে আরিফার ভেরিফিকেশন তথ্য চাওয়া হয়। বিষয়টি জানানো হয় থানা পুলিশকে। তারা বুঝতে পারেন পারচাকারীর চক্রের হাতে পড়েছেন আরিফা। বাড়ানো পুলিশের তৎপরতা।
আরিফাকে উদ্ধারকারী রৌমারী থানার এসআই রাসেল আহমেদ জানান, ভেরিফিকেশনের কথা বলে কৌশলে হোতাপাড়া ওভারব্রিজের কাছে ডেকে নেয়া হয় আরিফাকে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্বজনদের ডেকে পরিচয় আরও নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে আসা হয়। পরে আরিফাকে বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম জানান, চক্রের সদস্যারা ওৎপেতে থাকে। গ্রাম থেকে যাওয়া নারী-পুরুষদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করে। আরিফা সেই চক্রের হাতে পড়েছিল। আমাদের পুলিশ সঠিক সময় তাকে উদ্ধার করতে পেরেছে।
তিনি আরও জানান, পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।