ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,রোববার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ : গাজা উপত্যকাজুড়ে এখন টানটান উত্তেজনা। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরের তীরে এই ছোট্ট ভুখণ্ডের উত্তর দিকে বিরাজ করে মৃত্যু বিভীষিকা। এরিমধ্যে ইসরাইলের বিশেষ স্থল বাহিনী ঢুকে পড়েছে সেখানে। খুঁজে বেরাচ্ছে হামাস যোদ্ধাদের, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
Advertisement
এই অভিযান শুরুর পূর্বেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে বেসামরিক বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে চলে যাওয়ার জন্য ছয় ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দিয়েছিলো ইসরাইল। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই সময়সীমা শেষ হয়েছে। এখন সেখানে কি ঘটবে, তাই নিয়ে চিন্তায় বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমা শেষ হলে ইসরাইলের সেনারা কি করবে, সেই বিষয়ে আগাম কোনো ঘোষণা দেয়নি তেল আবিব। এনিয়ে কোনো তথ্য বা বিবৃতিও দেয়নি। তবে, এর আগে ইসরাইলের সেনা অধিপতিরা ঘোষণা দেন, এবারের অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে নির্মূল করা, নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
সময়সীমা ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন পরবর্তীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেই বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের প্রস্তুতি চলছে, কিন্তু কী ধরনের প্রস্তুতি, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের গাজা শহর থেকে উপত্যকার দক্ষিণ অংশে চলে যাওয়ার জন্য ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বেধে দেয়া ছয় ঘণ্টার আল্টিমেটাম শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় শেষ হয়েছে। এর আগেই অবশ্য চার লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক গাজা উত্তরাঞ্চল ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় চলে গেছেন।
উত্তর গাজায় বসবাসকারী ১১ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার কথা বলার একদিন পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেখানে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। পুরো উপত্যকা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে ইসরাইলি বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিলেও তার বার্তা ফিলিস্তিনিদের কাছে পৌঁছাবে না।
ইসরাইলের বিশেষ সেনা বহর আইডিএফ গেলো ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের ভয়াবহ হামলা আর অনুপ্রবেশের প্রতিশোধে উপত্যকায় টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকালে আইডিএফের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট বলেন, গাজায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথের অবরোধ চলবে।
Advertisement
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে নির্দিষ্ট সড়কে লোকজনকে নিরাপদ চলাচলের অনুমতি দেবে। বাসিন্দাদের এই সময়ের ব্যবহার করে বেইত হানুন থেকে খান ইউনিস পর্যন্ত দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো।
এছাড়াও আল-শাতে, আল-রিমাল এবং পশ্চিমের আল-জায়তুন এলাকার বাসিন্দাদের দালদুল ও আল-সানা রাস্তা ধরে সালাহ আল-দিন এবং আল-বাহর রাস্তার দিকে সরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত সোমবার গাজা উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানি ও পানি প্রবেশের ওপর সর্বাত্মক অবরোধ দেয় ইসরাইল।
ইসরাাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ডোরন স্পিলম্যান বলেন, গাজার বেশিরভাগ মানুষের এখন ইন্টারনেট সংযোগ নেই বলে আইডিএফ বিমান থেকে নতুন নিরাপদ রুট সম্পর্কে লিফলেট ফেলেছে। তবে, স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলের এই লিফলেট ফেলার বিষয়ে কেউ কিছু জানে না।
গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে চলে গেছে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সালাহ আল-দীন সড়ক। ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই সড়কটি। এই সড়কে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা হয়েছে। এই রুটে ভয়াবহ বিস্ফোরণের অন্তত পাঁচটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি পরিবারের সবাই নিহত হয়েছে এবং আশেপাশের এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শনিবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমন লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে।
টানা সাত দিন ধরে ইসরাইলের লাগাতার বিমান হামলায় কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা। গেলো বৃহস্পতিবার ইসরাইল কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত গাজায় ছয় হাজার বোমা ফেলা হয়েছে। প্রতিটি বোমার ওজন চার টন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় মৃতের সংখ্যা এখন অন্তত এক হাজার ৭৯৯ জন। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী ও শিশু। এতে আহতের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজারের কাছাকাছি।
Advertisement
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরাইলের মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০-তে, আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। ইসরাইলে হামলার সময় সেখান থেকে ১৫০ জনকে মুক্তিপণ হিসাবে নিয়ে গেছে হামাসের যোদ্ধারা। গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় এসব বন্দিদের ২২ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।