ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,রোববার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ : বিএনপি ছেড়েছেন নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দিন। ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে আছেন চাকসু’র তৎকালীন নির্বাচিত জিএস আজিম উদ্দিন। রোববার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হবে বলে নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন।
Advertisement
১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে জাতীয় ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে ভিপি পদে জয়ী হয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন। এরপর আর চাকসু নির্বাচন হয়নি। এখনও তার পরিচিতি চাকসু ভিপি হিসেবে। ছাত্র রাজনীতি ছাড়ার পর হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। বিএনপিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপিরসহ সভাপতি ছিলেন। এরপর গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে তার ঠাঁই হয়নি।
জানা গেছে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে নাজিম উদ্দিনের টানাপড়েন চলছিল। যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হলে তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এমনকি সংবাদ সম্মেলন করে ‘একজন যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যের’ সঙ্গে রাজনীতি না করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এরপরও তিনি বিএনপির সভা-সমাবেশসহ নিয়মিত কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু গত প্রায় একবছর ধরে তিনি দলে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
জানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি ছেড়ে দিলাম, তারাও আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আসলে আমাদের জন্য বিএনপির রাজনীতি করার উপযুক্ত পরিবেশ এখন আর নেই। আমি চাকসুর ভিপি হিসেবে নব্বইয়ের স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে নেতৃত্ব দিয়েছি। অথচ বিএনপি করার কারণে আমাকে রাজাকার-আলবদরের দল জামায়াত ইসলামীর সঙ্গেও রাজনীতি করতে হয়েছে। নিজের নীতি-আদর্শের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে। আর পারছিলাম না, সেজন্য বিএনপি ছেড়ে দিলাম।’
Advertisement
নতুন দল গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, আমাদের সবার মধ্যে একটা তাগিদ তৈরি হয়েছে যে নতুন ধারার রাজনীতি দরকার। বিএনপি-আওয়ামী লীগকে মানুষ দেখেছে। তাদের পক্ষে আর নতুন কোনো সম্ভাবনা জাগানো সম্ভব নয়। ডাকসু ভিপি নুর একটা আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু মোসাদ-ফোসাদ লিঙ্কের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি স্বাধীনতার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার পক্ষে একটা শক্তি দাঁড় করানোর। নব্বইয়ে আমরা ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে যে দশ দফা উত্থাপন করেছিলাম, তার ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চাই এবং সেটাই প্রগতিশীল গণতান্ত্রিকে ফোরাম।’
নতুন দলের আর কারা থাকছেন, এ প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ্দিন জানান, সারাদেশে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না এমন কিংবা পদবঞ্চিত অনেক নেতাকর্মীই নতুন দলে থাকছেন। এছাড়া জাসদ, বাসদসহ নব্বইয়ে সক্রিয় আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকবেন। ডাকসু, রাকসু, চাকসু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, বুয়েট ছাত্র সংসদের সাবেক নেতারাও এ দলে থাকছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন নাজিম উদ্দিন। মহাসচিব হচ্ছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট থেকে নব্বইয়ে চাকসু’র জিএস নির্বাচিত হওয়া আজিম উদ্দিন। ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে কিছুদিন বাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজিম। তবে গত তিন দশক ধরে তিনি কোনো সক্রিয় রাজনীতি করতেন না।
সিনিয়র সহ-সভাপতি হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সোহেল রহমান। তাকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক উল্লেখ করে নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সোহেল রহমান কুমিল্লা-১৪ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আরিফ মঈনউদ্দিনও নতুন দলে থাকছেন বলে নাজিম জানান।
তিনি আরও জানান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করবেন। না পেলেও জোটভুক্ত হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে কোনো জোটে যুক্ত হবেন, সেটার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
Advertisement
নাজিম উদ্দিনের দল ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘কেন দল ছাড়ছেন, সেটা আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের চেয়েও ভালো জানেন। সবাই এগুলো বোঝেন। এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’