ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মালদ্বীপ প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩ : মালদ্বীপ অপহরণের পাঁচ দিন পর এক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে উদ্ধার করেছে মালদ্বীপ পুলিশ। তিনি দেশটিতে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেব কাজ করেন। পাশাপাশি ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অপহরণকারীরা অপহৃতের মোবাইল ব্যবহার করে বাংলাদেশে পরিবারের কাছে ৮ লাখ টাকা দাবি করে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
অপহৃত প্রবাসী জলিল মিয়ার বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার কালিয়াম পাড়া গ্রামে। তিনি জানান, মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থানীয় নাগরিকদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে মালদ্বীপ পুলিশ।
৩৫ বছর বয়সী প্রবাসী বাংলাদেশি জলিল মিয়াকে অপহরণ করে তার পরিবার এবং প্রবাসী বন্ধুদের কাছে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অপহৃত জলিল মিয়ার দুই মেয়ের কাছ থেকে এই তথ্য জানা যায়। এছাড়াও মালদ্বীপের স্থানীয় পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়। অপহরণ চক্রের মূল হোতা আরিফসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি মালদ্বীপ পুলিশ। তবে তারা নিশ্চিত করেছেন যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সকলেই প্রবাসী বাংলাদেশি।
অপহৃতের স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ফোন দিয়ে মালদ্বীপে অবস্থানরত এক আত্মীয় রাকিবকে জলিল মিয়া অপহরণের বিষয়টি জানান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মালদ্বীপ পুলিশকে অবহিত করে রিপোর্ট দায়ের করেন। এর পর অপহৃত বাংলাদেশিকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশি ব্যক্তিকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে দেশ থেকে তার পরিবার অনলাইনের মাধ্যমে অপহরকারীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা পাঠান এবং মালদ্বীপ প্রবাসী রুবেলের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
অপহৃত জলিল মিয়ার নিকট আত্মীয় মালদ্বীপ প্রবাসী রাকিব জানান, গত ৩ অক্টোবর জলিলকে মালদ্বীপের তিলাফুশি আইল্যান্ড থেকে এনে রাজধানী মালে আটকে রেখে, তারই ফোন থেকে কল করে টাকা দাবি করেন। কিন্তু জলিল মিয়া কোথায় আছে জানতে চাইলে অপরপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেন। তারপর আমি বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মালদ্বীপ পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ৫ দিনপর তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। উদ্ধারের পর জলিল মিয়াকে তার কোম্পানির সহযোগিতায় দেশে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সাথে আমাদের বাংলাদেশিরা জড়িত ছিলেন।
Advertisement
অপহৃত জলিল মিয়ার নিজ এলাকার মালদ্বীপ প্রবাসী রুবেলের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়েছেন বলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন প্রবাসী রুবেল। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তাকে জলিল মিয়ার ফোন নাম্বার থেকে কল করে বলেছিল জলিল এক্সিডেন্ট করেছে, তাকে ট্রিটমেন্ট দিতে টাকা লাগবে, এখনি টাকাটা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে। তারপর পরই ৬ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠান তিনি।
এ বিষয়ে মালদ্বীপের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ জানান, জলিল মিয়ার বিষয়টি জানার পরপরই আমরা মালদ্বীপ পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে যুক্ত না হওয়ার জন্য মালদ্বীপে বসবাসরত সকল প্রবাসীকে সতর্ক করেন তিনি। এতে মালদ্বীপের কঠোর আইনের মুখোমুখি হওয়াসহ প্রবাসে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হবে বলেও জানান তিনি।
অপহৃরিত জলিল মিয়ার বড় মেয়ে জুলি আক্তার জানান, আমার আব্বু ২০১৬ সালে মালদ্বীপ গিয়েছিলেন। তিনি চাকুরির পাশাপাশি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আব্বুর সাথে টাঙ্গাইল জেলার, ঘাটার উপজেলার, গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আরিফ মিয়ার সাথে পরিচয় হয়, তার পিতার নাম ছিলো আবদুল জলিল। পরিচয়ের পর থেকে বন্ধুত্ব তারপর ২ লাখ টাকা দার নেন। দারের টাকা ফেরত চাওয়াতে বিরোধ শুরু হয়। এরপর আব্বুকে একদিন রাতে কল দিয়ে মালে আসতে বলে। মালে পৌঁছা মাত্রই আব্বুকে কৌশলে একটি রুমে নেওয়া হয়, সাথে সাথে তারা আব্বুর হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। সেখানে লোক ছিল ছয় জন। শুধু আরিফ ব্যতীত অন্যদের কাউকে আব্বু কোনদিন দেখে নাই এবং চিনতও না। সারারাত হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আব্বুকে আটকে রাখে। এরপর থেকে আব্বুর সাথে যোগাযোগ ছিলো না আমাদের। অনেক চেষ্টা করি, কিন্তু কোন যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। দুদিন পর আব্বুর নাম্বার থেকে কল করে ৮ লাখ টাকা দিতে বলে, না হলে আব্বুকে মেরে ফেলবে বলে জানায়। আমরা দিতে সম্মত হই তারপর তারা দুটি বিকাশ নাম্বার পাঠায়। এ দুই নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। বাকিটা আব্বুর আরেক বন্ধুর কাছ থেকে নেবে বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর আমরা সখিপুর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার এনামুল স্যার জানান, তিনি এই কেস নিতে পারবেন না। কারণ, এটা দেশের বাইরের ঘটনা। তারপর আমরা যে নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম ওই নাম্বারটির বিরুদ্ধে জিডি করি।
অপহৃত জলিল মিয়ার ছোটো মেয়ে যুথি আক্তার জুঁই জানান, আমি এবং আমার পরিবার এখানো বিপদ মুক্ত নই। আব্বু চলে আসার পরও অপরাধীরা বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দিচ্ছে। আমি আমার আব্বুর সাথে যা হয়েছে তার ন্যায় বিচার চাই।