ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিতেই নয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর হেলমেট পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই প্রতিনিয়ত হেলমেট না পড়ার অপরাধে প্রচলিত আইনে শাস্তি পেতে হয় মোটরচালকদের। তবে মোটরচালক যদি হন পুলিশের কোনো সদস্য তাহলেও কি তাকে শাস্তি পেতে হয়?
Advertisement
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরা এলাকায়, দেখা যায় এক পুলিশ সদস্য পেছনে এক নারীকে নিয়ে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে বেপরোয়া বাইক চালাচ্ছেন। পেছনে থাকা নারীর দেয়া উৎসাহে তার গাড়ির গতি যেনো বেড়েই চলছে। তবে দুজনের একজনও পরেননি হেলমেট। কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েও গেলেন তারা। কিন্তু তাদের বাধা দিতে দেখা গেল না কাউকে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সময় সংবাদের গাড়ি অনেকক্ষণ তাদের পিছু নিলেও তাদের বেপরোয়া গতির কারণে আটকাতে সক্ষম হয়নি। তবে তাদের মোটরবাইকটির নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-ল ৪৬-৮২৮৬।
শুধু রামপুরা এলাকা না, এমন চিত্র প্রায়ই দেখা যায় হাতিরঝিল এবং বাংলামোটর এলাকায়ও। বেপরোয়া গতি, বিনা হেলমেটে গাড়ি চালানো এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের বাইকের নম্বর প্লেটেও থাকে না। তবে এতসবের পরও তাদের আইনের আওতায় আনার দৃশ্য দৃশ্যমান না।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিরঝিল এলাকায় এক হকার জানান, এমন ঘটনার সাক্ষী তিনি প্রায় প্রতিদিনই হন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই দেখা যায় পুলিশের সদস্যরা বাইক চালান হেলমেট ছাড়া। আজকে আপনি যাকে দেখলেন তিনিতো পোশাক পরা, অনেক পুলিশ সদস্য রয়েছেন যারা পুলিশের পোশাক ছাড়াই বেপরোয়া গতিতে বাইক চালান। ট্রাফিক তাদের আটকালে পরিচয় দিয়ে চলে যান। আজ পর্যন্ত কাউকে মামলা দিতে দেখি নাই।
বাংলামোটর এলাকায় বাইকচালক মাহাবুব হাসান সময় সংবাদকে বলেন,
আমরা যারা বাইক চালাই তারা বাইক বের করার আগে ঘর থেকে হেলমেট বের করি। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর সাহস আমাদের নেই। নিরাপত্তার জন্য তো অবশ্যই কিন্তু পুলিশের ভয়ে আরও বেশি পরা হয় হেলমেট। যেভাবে পুলিশ সদস্যরা হেলমেট ছাড়া, নম্বর প্লেট ছাড়া বাইক চালান সেভাবে যদি আমরা বাইক চালাতাম তবে বাড়ি ঘর বেঁচে মামলার টাকা শোধ করতে হতো।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন,
এমন ঘটনা অবশ্যই আমাদের জন্য বিব্রতকর। তবে যথাযথ প্রমাণ থাকলে অবশ্যই আমরা সেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আইন সবার জন্য সমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সড়কে পুলিশ কিন্তু আইনের বাইরে নয়। পুলিশের কোনো সদস্য আইন বিরোধী কোনো কাজ করলে আমরা কখনোই ছাড় দেই না। প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি সদস্যের ইউনিট এই পুলিশ। তাই এর মধ্যে কিছু পুলিশের দ্বারা আইনের ব্যত্যয় ঘটে সেটা আমি অস্বীকার করি না। তবে আমরা কাউকে ছাড় দেই না। হেলমেট পরিধান না করলে তাকে সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তি বা জরিমানা করা হয় এবং হবেও।’
শুধু আইন থেকে রক্ষার জন্য হেলমেট না, জীবনের সুরক্ষার জন্যও প্রয়োজন হেলমেট। রাজধানীসহ সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একাধিক মৃত্যুর খবর আসছে প্রায় প্রতিদিন। এসব দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আরোহীর মাথায় হেলমেট থাকে না বা থাকলেও তাদের জীবন রক্ষা হচ্ছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে মানসম্মত হেলমেট নেই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, বিদায়ী বছর ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৯১ জন। নিহতের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৪১ শতাংশ ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।
Advertisement
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের (এআরআই) সর্বশেষ গত ২০২১ সালের এক যৌথ গবেষণায় দেশে মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীদের হেলমেট ব্যবহারের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, দেশের সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই মারা যাচ্ছেন হেলমেট না পরার কারণে। আর হেলমেট পরিহিত অবস্থায় মারা যাচ্ছেন ১২ শতাংশ চালক-আরোহী।