থামছেই না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাল প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগের হল ও শাটল ট্রেন ভিত্তিক গ্রুপ-উপগ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ-মারামারি চলছে প্রতিনিয়ত। এতে অশান্ত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। যে কারণে শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র এতেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে, এমনটা মনে করছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ইদানিং সামান্য বিষয়েই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ-উপগ্রুপগুলো। কমবেশি সবারই অভিযোগের আঙুল ছাত্রলীগের দিকে। গত পাঁচ দিনে এই গ্রুপগুলো সংঘর্ষে জড়িয়েছে কমপক্ষে ১৫ বার। এর ভেতর নিজেদের মধ্যে মারামারি ছাড়াও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাও আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এতে তাদের শিক্ষাজীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। ক্যাম্পাসে বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে। আমার বাবা-মা খুব চিন্তায় থাকেন। খবর পেলেই কল করে তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানান। তাদের দুশ্চিন্তা হলে এমনিতেই আমাদের পড়াশোনার ওপর চাপ তৈরি হয়।’

cu- University of Chittagong

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি, সন্ত্রাস এসব না থাকলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নত হয়। পড়ারেখার পরিবেশ ভালো থাকলে আমাদের এমনিতেই উন্নতি হবে। আমরা চাই, সুস্থ, নিরাপদ পরিবেশ। যেখানে কোনো সংঘর্ষ থাকবে না। কমিটি আসে কমিটি যায় কিন্তু সংঘর্ষতো থাকেই। এজন্য আমাদের চাপা আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় রাতে সংঘর্ষ হয়। পরদিন আমাদের পরীক্ষা থাকে। তখন সংশয়ে থাকতে হয়, পরীক্ষা হবে কি হবে না। এরকম হলেতো কল্যাণকর কিছু হবে না।’

বেপরোয়া এসব কার্যক্রমে বাধ্য হয়ে রোববার বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের লক্ষ্য অছাত্র-বহিষ্কৃতদের বাদ দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সামনে আনা। ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গত এক বছরে কোনো মিটিং করতে পারেনি।

গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে ৫০টিরও বেশি। এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি।

Advertisement

গত পাঁচ বছরে নানা কারণে ১৬২ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ বছরে ৬০০ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে এক হাজার জন। এই সময় বহিষ্কার করা করা হয়েছে ১৯০ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে। গত ২৭ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সংঘর্ষের প্রসঙ্গে এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের কমিটি পাঁচ বছর হয়েছে। অনেক বাধা এসেছে। যারা কর্মী ছিলো তাদের সবার আকাঙ্ক্ষা থাকে নেতৃত্ব দেওয়ার। এই জায়গায় সিনিয়রদের মধ্যে ফাটল তৈরি হয়েছে। যে কারণে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। পুরাতনরা যাবেন, নতুনরা আসবে-এটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জন্য এখন সুসংগঠিত হওয়ার সময়। সামনে নির্বাচন আসছে। আমরা কীভাবে সংগঠিত হয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্ত করতে পারি সেদিকে সিনিয়রদের নজর দেওয়া দরকার।’

ছাত্রলীগের আরেক কর্মী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যতদিন বগিভিত্তিক রাজনীতি থাকবে ততদিন কমিটি কোনো অবদান রাখতে পারবে না। বগিভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে আবাসকি হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে।’

এদিকে, রোববার বিভিন্ন আবাসিক হলে অবস্থানরত অছাত্র ও বহিষ্কৃতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।

ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের বিষয়ে প্রতিবেদন করায় রোববার দুপুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক মোশাররফ শাহকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই সাংবাদিক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, বলেন, যারা হলে বরাদ্দকৃত আছে এবং যারা বরাদ্দের আবেদন করেছে তাদের তালিকা করা হবে। এরপর হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখানে যদি আমাদের বাধা দেওয়া হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Advertisement

জামায়াত-শিবিরের আধিপত্যের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি-সংস্কৃতি চর্চা করতে না পারায়, প্রগতিশীল সংগঠনগুলো শাটল ট্রেনের বগি ভিত্তিক গ্রুপগুলো গড়ে তুলেছিলো। এর মধ্যে ১১টি গ্রুপই এখন ছাত্রলীগের।