বাজার থেকে আলু উধাও মজুতদারদের কারসাজি (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),জয়পুরহাট প্রতিনিধি ,রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি করতে জয়পুরহাটের হিমাগার ও খুচরা বাজারে তদারকির পাশাপাশি অভিযান জোরদার করেছে প্রশাসন। এর ফলে বাজারে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এ ছাড়া হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে বলেও জানা গেছে।

Advertisement

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় গত মৌসুমে ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে জেলার ১৯টি হিমাগারে ১ লাখ ৫০ হাজার ১০৪ টন আলু মজুত হয়েছে।

 

 

 

হিমাগারে সংরক্ষণের সময় এসব আলু কেনা হয় ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে। হিমাগারের ভাড়া, বস্তা, পরিবহন খরচ মিলে আলু হিমাগার থেকে বের হচ্ছে ১৬ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে। এক মাস ধরে এই আলু পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া পাইকারি দাম ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও মজুতদারদের লাভ কেজি প্রতি ১০-১১ টাকা। খুচরা পর্যায়েও একই লাভ থাকবে।

সচেতন মহলের ভাষ্য, এ অবস্থায় তারা হিমাগার থেকে আলু বের করা বন্ধ রেখে খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকরা হিমাগারে যে পরিমাণ আলু রাখেন তা খুবই অল্প। এর মধ্যে বেশির ভাগই বীজ আলু। আলু তোলার সময় যেটুকু বীজের জন্য লাগবে তা রেখে বাকি অংশ বিক্রি করে দেন। এখন সিংহভাগ আলুই ব্যবসায়ীদের দখলে।

স্থানীয় কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেঁধে দেওয়া দাম কেউই মানছে না। বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। দেশি পাকরি (লাল) প্রতি কেজি ৬৫, স্ট্রিক ৫০, ডায়মন্ড (সাদা) ৫৫ ও ফাটা পাকরি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার পাইকারি দাম বেঁধে দিয়েছে ২৭ টাকা এবং খুচরা ৩৬ টাকা।

Advertisement

ফরিদ উদ্দিন পুনট বাজারের খুচরা আলু ব্যবসায়ী। তাঁর ভাষ্য, তিন দিন ধরে হিমাগারে গিয়ে আলু পাচ্ছেন না তিনি। প্রশাসনের লোকজন প্রতিদিন হিমাগারে আসে। তাই মজুতদাররা আলু বের করছে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু হিমাগারে আছে। অল্প পাওয়া গেলেও দাম বেশি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অল্প পরিমাণ আলু আছে, এগুলো বিক্রি শেষ হলে আর বিক্রি করবেন না তিনি।

গতকাল শনিবার সকালে জয়পুরহাট পূর্ব বাজারে কোনো সবজির দোকানে আলু পাওয়া যায়নি। সেখানকার সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রকারভেদে আলু ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। আর সেই আলু ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হবে। এজন্য তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।

কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, শেডে আলু নেই। যাও আছে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে না। ওই আলু অন্যত্র মজুতের জন্য সরানো হচ্ছে। এম ইসরাত হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, সরকার ২৭ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই আলু পাইকারি বাজারে ৩৬-৩৭ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। তাই আলু কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছি। কৃষকরা যখন আলু বের করবেন তখন একটু দাম কমতে পারে। কারণ, আলু বিক্রি করে জমির সারসহ যাবতীয় জিনিস কিনবেন। এখন যেসব আলু বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো ব্যবসায়ীদের।

কয়েকটি হিমাগারের কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পরও আলুর দাম বেশি ছিল। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের অভিযানের পর হিমাগার থেকে ব্যবসায়ীরা আর আলু বের করছেন না। এখনও হিমাগারে সংরক্ষণের ৪৫ শতাংশ আলু মজুত আছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বীজ আলু।

নরওয়েস্ট হিমাগারের ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন জানান, দুই দিন ধরে বেচাকেনা বন্ধ। সেজন্যই শেড ফাঁকা পড়ে আছে। তাঁর দাবি, যেদিন থেকে আলুর দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন না। একই অবস্থা আশপাশের হিমাগারগুলোতেও। দুই-একটি হিমাগারে আলু বের করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। এসব আলু অন্যত্র সরিয়ে মজুত করা হচ্ছে।

Advertisement

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, হিমাগার থেকে মজুতদাররা আলু বেরও করছেন না, বিক্রিও করছেন না। এতে খুচরা বাজারে দাম কমানো যাচ্ছে না। মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।