ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) করা জাল টাকার একটি মামলা ৭ বছর পর মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ওই মামলার দুই আসামি পল্টন বন্ধু হোটেলের ম্যানেজার হাসান মজুমদার ও বাবুর্চি সোহেল রানাকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দিয়েছেন আদালত। অপরদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) নির্দেশ দেন আদালত।
Advertisement
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি এই মামলার রায় হয়। পরে সেই আদেশের কপি গত ১৩ সেপ্টম্বর পুলিশ সদর দপ্তরেও পৌঁছায়। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত পুলিশের সদস্যরা হলেন- পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, এসআই দেওয়ান উজ্জল হোসেন, এএসআই জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মোমিনুল হক, নাজমুল হক প্রধান, কনেস্টবল নয়ন কুমার ও গোলাম সারোয়ার।
এ ঘটনার পর জাল টাকার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত ডিবি পুলিশের এই সদস্যদের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন পদোন্নতিও পেয়েছেন।
আদালত থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি বরাবর পাঠানো একটি আদেশের কপি সমকালের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, একজন পরিদর্শক, একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৫ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এবং দুই কনস্টেবলের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আদেশটি পাওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতকে বিষয়টি অবহতি করতে বলা হয়।
মামলার আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫–ক ধারার অভিযোগের দায় থেকে হাসান ও সোহেলকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো। এ ছাড়া মিথ্যা মামলার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে পুরান পল্টন এলাকার বন্ধু হোটলের অভ্যর্থনা রুম থেকে হোটেলের ম্যানেজার হাসান মজুমদার ও বাবুর্চি সোহেল রানাকে হাতকড়া পড়িয়ে তুলে আনেন ডিবি মতিঝিল বিভাগের ৬-৭ জন সদস্য। পরে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাদের কাছে অবৈধভাবে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু হাসান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে ফকিরাপুল মাছ বাজার এলাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার জাল নোটসহ তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে ডিবির পরিদর্শক তপন বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করে।
Advertisement
ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার সমকালকে বলেন, ওই মামলায় রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নিয়েও তারা টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি এক টাকাও দিতে রাজি হইনি। এ মামলা চালাতে গিয়ে বাপের সাত লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছি। বোন জামাই ও মামাদের থেকে ধার নিয়েছি, যা এখনও শোধ করতে পারিনি। সাত বছরে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পাঁচ মাস ১৭ দিন জেল খেটেছি। দু’দিন রিমান্ডে ছিলাম। এসব করে ডিবি পুলিশ আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিলো। তাও খুশি যে, আজ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এসব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছিল পুলিশ গঠিত তদন্ত কমিটি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন হাসান।
এদিকে জাল টাকার মামলার বিষয়ে তখনকার গুলশান বিভাগের ক্যান্টমেন্ট জোনের এডিসি মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া ২০১৭ সালে ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে ডিবির করা মামলা প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী সমকালকে বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) বেলাল উদ্দিন বলেন, ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত থেকে একটি আদেশের কপি পেয়েছি। এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
Advertisement
তিনি আরও জানান, আদেশের কপি তাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তর আদালতের সব আদেশের বিষয়ে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ক্যামেরায় ধরা পড়ে দুজনকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য