পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর এবার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমনসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করবেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের পদসমূহ ২য় ও ১ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়টি অষ্টম পে-স্কেলে নেই। এর আগে শিক্ষা ক্যাডারের ৫ম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে ৪র্থ গ্রেডের অধ্যাপক হতেন। সেখান থেকে ৫০ শতাংশ অধ্যাপকরা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতে পারতেন। কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোতে এ বৈষম্য নিরসন না করে সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অধ্যাপকদের ৪র্থ গ্রেড হতেই ‘অসম্মানজনকভাবে’ অবসরে যেতে হবে। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় এসব পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমনের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন ৩০৬টি সরকারি কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক।
অষ্টম পে-স্কেলের অসঙ্গতি দূরসহ নায়েম মহাপরিচালক, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা সদরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকেও গ্রেড-১ এ উন্নীত, মাউশি, নায়েম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক; অনার্স/মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং এনসিটিবির সদস্যদের পদকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীত, অনার্স ও মাস্টার্স রয়েছে এমন বিভাগে দ্বিতীয় গ্রেডের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি, ব্যাচ ভিত্তিক পদোন্নতি এবং বিকল্প ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখার দাবিতে কয়েক মাস ধরে মানববন্ধন, অবস্থান ও কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আনছেন শিক্ষকরা।
এছাড়া দাবি পূরণে সরকারকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাতেও দাবি আদায় না হওয়ায় ৪ ও ৫ জানুয়ারি পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। এরপর ১১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। তাতেও সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় দাবি আদায়ে করণীয় ঠিক করতে গত শুক্রবার নায়েম মিলনায়তনে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। এরপর দাবি পূরণে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেবেন। দাবি পূরণ না হলে ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবারো ক্লাস বর্জন করবেন তারা।
একদিন সময় দিয়ে আবারো ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষাসহ সকল ক্লাস বর্জন করবেন শিক্ষকরা। এরমধ্যেও দাবি পূরণ না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি শাটডাউন (বন্ধ) করে পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতর ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, আমাদের দাবি পূরণের জন্য ২৫ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সরকারকে সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো আলোচনাও করেনি। দাবি আদায়ে আগামী মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।