ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,সোমবার, ২১ আগস্ট ২০২৩ : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেয়া হয় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। এ সময়ে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে ৪৯ জন আসামিকে দণ্ড দিয়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে ডেথ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
Advertisement
গ্রেনেড হামলা মামলায় প্রথম আসামি ছিলেন ২২ জন। অধিকতর তদন্তের পর সম্পূরক চার্জশিটে আরও ৩০ জন যুক্ত হলে আসামির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। মামলার যখন রায় হয় তখন আসামি ছিলেন ৪৯ জন।
কেননা বিচার চলাকালীন যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আসামির তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেন আদালত।
যখন মামলার রায় ঘোষণা করা হয়, তখন ৪৯ আসামির মধ্যে পলাতক ছিলেন ১৮ জন। পুলিশের খাতায় বর্তমানে পলাতক আছেন ১৩ জন।
এদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জামিনে আছেন ৮ জন। বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন ২৭ জন। যাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন।
পলাতকদের মধ্যে পুলিশের সাবেক দুই উপ-কমিশনার (ডিসি) খান সাঈদ হাসান এবং ওবায়দুর রহমান খানও ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
২০২১ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই বছরের ১৫ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম।
জানা যায়, পুলিশের সাবেক তিন আইজি, দুই ডিসি এবং সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তাকেও এ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সিআইডির কর্মকর্তারা তদন্তে সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় সাজা দেওয়া হয়। সাজা পাওয়া পুলিশের সব কর্মকর্তা জামিনে রয়েছেন।
ওইসব পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন–সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, ডিএমপির সাবেক দুই উপ-কমিশনার খান সাঈদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খান, সিআইডির সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান।
Advertisement
পলাতক আসামিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পুলিশের খাতায় পলাতক থাকলেও তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে। তিনি প্রকাশ্যেই বিএনপির রাজনীতি পরিচালনা করছেন।
মামলার আরেক আসামি বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব চৌধুরী আবদুল হারিছ ওরফে হারিছ চৌধুরীর বিষয়টি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে তিনি মারা গেছেন বলে জানান তার চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন চৌধুরী। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে একটি ট্যাবলয়েড দৈনিকের খবর অনুযায়ী হারিছ চৌধুরী বাংলাদেশেই আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
আসামিদের মধ্যে জঙ্গি নেতা মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই এবং মুফতি শফিকুর রহমানকে র্যাব বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী পলাতক অন্য আসামিরা হচ্ছেন– কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ওরফে ডিউক, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, বাবু রাতুল আহমেদ, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল এবং মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের।
এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাতুল আহমেদ বাবুর অবস্থান জানতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা আছে।
পলাতক বেশিরভাগ আসামির অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা জানে না। বিগত ১৯ বছরেও পলাতকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। আসামিরা কে কোথায় আছেন তা জেনেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের এনসিবি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। খুব শিগগিরই তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ । পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ও খুঁজে বের করতে তৎপরতার কোনও ঘাটতি নেই পুলিশের পক্ষ থেকে ।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন তা জেনেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবে ইন্টারপোলের সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।