ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নারায়ণগঞ্জের বন্দর প্রতিনিধি, শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০২৩ : বছর সাতেক আগে হতদরিদ্র সীমা বেগম ও তার স্বামী মিন্টু মিয়া সরিষাবাড়ী থেকে এসে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বসবাস শুরু করে। অভাবের সংসারে নিয়মিত লেগে থাকতো টানাপোড়েন। এক পর্যায়ে বৈধপথে অভাব ঘোচানোর বদলে স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তোলেন মাদকচক্র। সীমান্ত এলাকা থেকে হেরোইন এনে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও আশপাশের এলাকায়। এতে বদলে যায় এ দম্পতির ভাগ্য। এক সময় আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন সীমা-মিন্টু দম্পতি। বিভিন্ন জেলায় মালিক হন নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তির।
Advertisement
সিআইডির মানি লন্ডারিং ইউনিট ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আলাদা তদন্তে ওঠে আসে এই দম্পতির আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠার রহস্য। সম্প্রতি এই দম্পতির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে সিআইডি। যাতে বলা হয়, সীমা ও মিন্টুর আয়ের বৈধ কোনো উৎস নেই। তারা যেসব সম্পদ অর্জন করেছেন, তার পুরোটা মাদক কারবারের অর্থ দিয়ে কেনা।
সিআইডি সূত্র জানায়, সীমা ও মিন্টু চক্রের সঙ্গে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন বিল্লাল সরকার, রুমি বেগম, ফজর ও খাদেম। রাজশাহীর সদর এলাকার জয়নাল মিয়া নামে একজনের কাছ থেকে নিয়মিত হেরোইনের চালান এই দম্পতির কাছে আসত। চক্রের ক্যাশিয়ার হলেন বিল্লাল। মাদক কেনাবেচার পর তার মাধ্যমেই টাকা লেনদেন হয়। মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে মাদকের অর্থ স্থানান্তর করতেন বিল্লাল।
তদন্তে উঠে এসেছে, মাদক বিক্রির অর্থ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায় এই দম্পতি ১২ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেই জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দর এলাকায় তাদের আরও তিনটি আধাপাকা ঘর রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় তারা নামে-বেনামে জমি কিনেছেন।
Advertisement
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান জানান, ওই দম্পতি নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে আশপাশের ৭-৮টি জেলায় হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা বিভিন্ন চক্রের কাছে পাঠাত । তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে। মাদক কারবারের অর্থ দিয়ে তারা কী কী সম্পদ করেছেন, তা বের করার জন্য তদন্ত করেছি।
সিআইডি বলছে, রাজধানীর উপকণ্ঠের এই মাদক চক্রটির কাছে নগদ লাখ লাখ টাকা রয়েছে। ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্য বিল্লালের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। সিআইডি আরও জানায়, এই চক্রের আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা জাল পাতা হয়েছে। সীমান্ত এলাকা থেকে যারা তাদের কাছে হেরোইন পাঠাচ্ছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন দেশের বাইরে রয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিভিন্ন কৌশলে মাদক এনে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্পটে রাখা হয়। এর পর তা সুবিধাজনক সময়ে ঢোকানো হয় ঢাকায়। এছাড়া সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে দেশে যে মাদক ঢুকছে, সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে নারায়ণগঞ্জকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা।
সূত্র : সমকাল