ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি,শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০২৩ : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং মাদক পাচারের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়াই এখন প্রধান দাবি উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দাদের। কক্সবাজার-৪ নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা জানান, খোদ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মাদক পাচারের তথ্য থাকায়, তারা স্বাভাবিক উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। এরই মধ্যে সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতেরও রয়েছে আলাদা প্রার্থী।
Advertisement
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সমুদ্র আর আকাশের নীল যেখানে মিলেমিশে নাফ নদ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙচিল সঙ্গী হয় পর্যটকদের। তবে বর্ষা এলেই বন্ধ জাহাজ চলাচল।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ আর মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ অংশেও পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি। একদিকে নাফ নদ আর অন্যদিকে পাহাড়ের সারি। মৎস্য আহরণ, চিংড়ি, লবণ ধান ও পান চাষ মানুষের পেশা। জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, দারিদ্রও বেশি। শহরের রাস্তাও আছে ভাঙা।
অবশ্য উল্টো চিত্র উখিয়ায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ক্যাম্পে উপচে পড়ছে অনুদানও। তবে আরসাসহ মিয়ানমার কেন্দ্রিক সাত প্রধান গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব সংঘাত ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত করে। তারা এবং তাদের অবৈধ অস্ত্র নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা আছে মানুষের মনে।
শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং জালিয়ারদ্বীপে ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নির্মাণের কাজও চলছে। তবে শাহাবুদ্দিনের মত এবার যারা প্রথম ভোট দেবেন তারা চান পর্যটন ও অবকাঠামোর আরও উন্নতি।
কয়েকজন নতুন ভোটার বলেন, টুরিস্ট পুলিশের নজরদারি আরেকটু নিশ্চিত করা গেলে আরও বেশি টুরিস্ট পাওয়া যাবে।
ইয়াবাসহ মাদক, অস্ত্র ও গরু পাচারের অভিশাপ থেকেও মুক্তি চান ভোটাররা।
ইয়াবা বললেই আলোচনায় আসে আসে দু’বারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম। প্রথমে বিএনপি, পরে জাতীয় পার্টির নেতা বাবা এজাহার কোম্পানি। তার পথ ধরেই ৯৬ -এর নির্বাচনে আসেন বদি। সে বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেলেও জুনের নির্বাচনে পান। কিন্তু দলটির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে বাতিল হয় তা। ক্ষিপ্ত বদি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী মনোনয়নের অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু পাননি। তবু বদি থাকেন আওয়ামী পক্ষে আর বাবা এজাহার মিয়া থাকেন বিএনপি পক্ষে।
Advertisement
২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী মনোনয়নেই সংসদ সদস্য হন বদি। ১৪ সালে কক্সবাজারের বাকি তিন আসনে প্রার্থীরা বিনা ভোটে জিতলেও এখানে জাতীয় পার্টিকে হারিয়ে জেতেন বদি।
কিন্তু ২০১৮ তে করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে থাকা বদি ও তার স্বজনদের ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ, অভিযানে মৃত্যু ও আত্মসমর্পণের তথ্য আসে। সেই সাথে দুদকের মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় ২০১৮ তে বদির বদলে মনোনয়ন পান তার স্ত্রী শাহিন আক্তার। জয়ীও হন। তবে অভিযোগ আছে এরপর তার বদলে বদিই চালান এলাকার কাজ।
তাই মনোনায়নপ্রার্থী এবং কক্সবাজার আওয়ামী যুবলীগের এই সভাপতিসহ অনেকেই এবার বদিমুক্ত মনোনয়ন দেখতে চান।
কক্সবাজার আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর বলেন, আমি ইয়াবা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলে আগে আমার আত্মীয়-স্বজনকে তা থেকে দূরে রাখতে হবে। বদি নিজে যেখানে সাজা পেয়েছেন এবং তার কাছের অনেকেই এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাই তার পক্ষে কতটুকু জনমত গড়ে তোলা সম্ভব, তার প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিন লাখ ৩৫ হাজার ৪৪৫ জন ভোটারের এই এলাকার নির্বাচনী ইতিহাস অবশ্য বহুদিন ছিল বিএনপির পক্ষে। চারবার নির্বাচিত কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়ার বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী এবারও মনোনায়নপ্রত্যাশী। তবে তার ভাই জামায়াতের শাহজালাল চৌধুরী প্রার্থী হলে ভোটভাগ হতে পারে। বিএনপির এই সাবেক হুইপ অবশ্য হুমকি দিয়েই বলেন, বিএনপি এলে এবারের নির্বাচন হবে কঠিন।
বিএনপি মনোনয়ন প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা বাধা দেব, রক্তাক্ত হবে পরিবেশ।
তবে হুমকি দেয়ার অবস্থা আর নেই, বলছেন স্থানীয় আওয়ামী মনোনয়ন প্রার্থীরা।
সোহেল বাহাদুর বলেন, প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই।
Advertisement
এই আসনে আগেরবার জামানত হারানো জাতীয় পার্টিসহ চারদল এবারও প্রার্থী দেবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মজার সংযোগ হল নির্বাচনী ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এ আসনে যারা জিতেছে সেই দলই গঠন করেছে সরকার।