অধ্যাপক তাহের হত্যা : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩ : ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমকে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামি মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসির প্রস্তুতি চলছিল কয়েকদিন ধরেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপরই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হলো। ফাঁসির দড়িতে ঝোলা সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ছিলেন অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী। আর জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন তাহেরের বাড়ির কেয়ারটেকার।

দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের পর অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

২০০৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। পরে তার ছেলে বাদী হয়ে মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশ তদন্তে জানতে পারে পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংস হত্যার শিকার হন অধ্যাপক তাহের। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেয়।

মঙ্গলবার সকালে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষের ডাকে দুই আসামির পরিবারের ৩৫ জন সদস্য কারাগারে তাদের সাথে শেষ দেখা করতে যান।

Advertisement

এরপর শুরু হয় ফাঁসির আনুষ্ঠানিকতা। জল্লাদসহ ফাঁসি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে কয়েকদিন ধরেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে চলছিল ফাঁসির মহড়া।

বৃহস্পতিবার রাতেই দুইজনকে ফাঁসি দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

রাতে জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সোহরাব হোসেন কারাগারে ঢোকেন। ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করার জন্য তাকে ডাকা হয়। ডাকা পান মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যও। কারাগারে ঢুকতে দেখা গেছে কারা চিকিৎসক ডা. মিজান উদ্দিন ও ডা. জুবায়েরকে। প্রবেশ করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কারাগারে সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি আজ রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর হয়েছে। এরই মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মঞ্চ, পাঁচ জল্লাদ ও লাশবাহী গাড়ি। রাজশাহী জেলা কারাগারের একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, দুই আসামির ফাঁসির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ফাঁসির দড়ি। জল্লাদ আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচজন জল্লাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মরদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা দুটি অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে কারা মসজিদের ইমামকেও। তবে এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি।

এর আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখা করেছেন।
কারাগার থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তবে বিচার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। মাঝখানে তারকাটা ছিল। ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ছেলে দোয়া চেয়েছে।

Advertisement

এদিকে আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবার দেখা করলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। অনেকটা নীরবে কারাগার ত্যাগ করেছেন তারা।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংস হত্যার শিকার হন তিনি। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় দুজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।