হিরো আলম আক্রান্ত মূল হামলাকারী মানিক ও আলামিন পুলিশের জালে (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩ : হিরো আলমের ওপর হামলার সময় যে দু’জন বেশি আগ্রাসী ছিলেন তাদের একজন মানিক গাজী, অন্যজন আলামিন। পুলিশের গুলশান বিভাগ গতকাল বুধবার ঢাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের দু’জনকে আটক করে। সে সময় তারা হামলার দিনের পোশাকে ছিলেন। ঘটনার ব্যাপারে তাদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ আটকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সমকাল।

Advertisement

এদিকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে মারধরের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছে পুলিশ। কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত, কারা দায়ী প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে কী উঠে এসেছে তার বিস্তারিত জানা যায়নি। গত সোমবার ভোট গ্রহণের একেবারে শেষ পর্যায়ে কারও ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে কিনা– পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তা খুঁজছে। অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা, নাকি তাদের কেউ পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করেছে– এ ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল ঢাকার ১৩ দূতাবাস ও হাইকমিশন যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।

হিরো আলম আক্রান্তের ঘটনায় গতকালের দু’জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৯ জনকে আইনের আওতায় নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া আরও অন্তত আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে গতকাল বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চলেছে। পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলায় আলামিন ও মানিক ছিলেন মূল ভূমিকায়। ওই সময় মানিকের পরনে ছিল কালো টি-শার্ট আর আলামিন চেক শার্ট।

Advertisement

এ ব্যাপারে গুলশান বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ সমকালকে বলেন, কারা জড়িত, কীভাবে হামলার ঘটনার সূত্রপাত এটা চিহ্নিত করে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের এডিসি এসএম জাহাঙ্গীর হাসান বলেন, এ ঘটনায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লু নিয়ে কাজ করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ ঘটনার আদ্যোপান্ত সামনে আসবে। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকে ঢাকার বাইরে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোনও তারা বন্ধ রেখেছেন। এর আগে হামলার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– ছানোয়ার কাজী, বিপ্লব হোসেন, মাহমুদুল হাসান, মোজাহিদ খান, আশিক সরকার, হৃদয় শেখ ও সোহেল মোল্লা। স্থানীয়রা বলছেন, জড়িতদের অনেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। এর মধ্যে কয়েকজন বনানী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মেহেদীর অনুসারী। তবে মেহেদী বলেন, ‘হাসান, মোজাহিদ, হৃদয় ও আশিক আমার ছোট ভাইয়ের মতো। হামলার ঘটনায় তারা জড়িত নয়। ফুটেজেও তাদের দেখা যায়নি। এ ঘটনায় আমাকে জড়ানোর অপচেষ্টা চলছে।’

বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে কে অপরাধী। কেউ নিরপরাধ হলে মামলায় তার সম্পৃক্ততা থাকবে না। তবে আশিককে একটি ফুটেজে দেখা গেছে। অন্য তিনজনের ব্যাপারে আরও যাচাই করা হবে।

১৩ দূতাবাসের নিন্দা

হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকার ১৩ দূতাবাস ও হাইকমিশন গতকাল যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহির দাবি জানাই। বাংলাদেশের সামনের জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই। যৌথ বিবৃতিতে সই করা দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হচ্ছে– কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন।

‘আমাকে মেরে ফেলা হতে পারে’

নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন হিরো আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে মেরে ফেলা হতে পারে।’ গতকাল রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আলম বলেন, ‘বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চারটি মোটরসাইকেলে করে ৮-১০ জন এসে রামপুরা মহানগর প্রজেক্টে আমার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে নাম ধরে চিৎকার করে। আমাকে বেরিয়ে আসতে বলে। অফিসের ফটকে ভাঙচুর করে। আমি আমার জীবন নিয়ে খুব শঙ্কায় আছি। আমাকে মেরে ফেলার জন্য তারা খুঁজছে। এটা আপনাদের মাধ্যমে জানালাম।’

Advertisement

যারা হুমকি দিচ্ছে তারা কারা– এ প্রশ্নে হিরো আলম বলেন, ‘তারা কে বা কারা, আমি জানি না। অফিসের গেট তারা ভাঙচুর করেছে। এই ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করেছি। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। ভবিষ্যতেও আমি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেব না।