বিএনপির নির্বাচনী কৌশল: বর্জনে সন্ত্রাস, অংশগ্রহণে ষড়যন্ত্র (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩ : সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একটা রাজনৈতিক দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা ভুল সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অর্থাৎ বিএনপি সবসময় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশে যখন জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসে তখন বেগম খলেদা জিয়ার এ দলটি খুবই বিধ্বংসী হয়ে ওঠে।

Advertisement

রাজনৈতি বিশেষজ্ঞরা বিএনপির মধ্যে এখন সে রকম লক্ষণই দেখতে পাচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে দলটির সিদ্ধান্তহীনতা ও ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের নামে দলটি জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যদিয়ে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের আগুন-সন্ত্রাসের বলি হয়েছে কয়েকশ’ সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে ২০১৮ সালে অংশ নিলেও নির্বাচনকে বানচাল এবং বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।

এবারও দলটি নির্বাচন বানচালের অংশ হিসেবে আদালতের মাধ্যমে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের নামে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে বিএনপির নির্বাচনবিমুখ আচরণ এবং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার অপচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
২০০৯ সাল থেকে বিএনপি তার চরমপন্থী মিত্র জামায়াতকে সঙ্গী করে ভয়ংকর রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করে। এর অংশ হিসেবে প্রতিবাদের নামে রাজপথে সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সহিংস ও প্রাণঘাতী হামলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ও তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করে তারা।
নির্বাচন বর্জনের নামে ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন গণপরিবহনে পেট্রোল বোমা এবং ককটেল হামলার মধ্যদিয়ে তারা সহিংসতায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
  

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও সহিংসতা

 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী বিচার বন্ধে বিএনপির সমর্থন নিয়ে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায়। ওই সময় সহিংসতার ৪১৯টি ঘটনা ঘটে।
 
গণমাধ্যমের হিসাব মতে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরবর্তী দুদিনেই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারান। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
  

দশম জাতীয় নির্বাচনে তাণ্ডব

 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সে সময় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা শত শত যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।
 
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারান। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এছাড়া ছোট দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়।
সহিংসতার কারণে নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সারা দেশে ৫৮২টি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়।  
  

নির্বাচন ঘিরে শতাধিক প্রাণহানি

 

২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপি-জামায়াত জোট, ঘটে প্রাণহানি। এদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় আহত হন সহস্রাধিক। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সে সময় ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি নানা দফতর।
 
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রীর আদালতে হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারা দেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
 
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়।
  

নির্বাচন বর্জন করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চলে বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতন (ফাইল ছবি)

 

বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে আর্থিক ক্ষতি

 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মতে, ২০১৩ সালের নির্বাচন ঘিরে হরতাল-অবরোধের প্রতিদিন দেশের ১৬০০ কোটি টাকা (অথবা ১৯২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা জিডিপির ০.২ শতাংশ ক্ষতি হয়। এর অর্থ ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে দেশের ১.৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ নষ্ট হয়।
তবে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় যে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
  

আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা

 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পুলিশের জমা দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত দেশের ২১ জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। আর ওই সময় মোট ১৬০টি হামলা ও অত্যাচারের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
 
২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ একটি সুয়োমোটো রুল জারি করেন, যার মধ্যে বিভিন্ন পুলিশ রেঞ্জের কর্মকর্তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, রংপুর, গাইবান্ধা নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও জেলায় হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা উঠে আসে।
 

Advertisement

নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ষড়যন্ত্র

 

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নতুন ছক নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। নির্বাচনে এলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটুট থাকে তারা, অংশ নেয় রাজনৈতিক সংলাপে। জামায়াতের সঙ্গে ২০ বছরের জোট বহাল রেখে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
 
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো জামায়াতকে ছেড়ে দেয় ২২টি আসন। নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ বরাদ্দ দেয় জামায়াত প্রার্থীদের জন্য। এ ছাড়া দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বাণিজ্যের মাধ্যমে মনোনয়ন বরাদ্দ দেয়ারও অভিযোগ ওঠে।  
 
সে বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হন ড. কামাল।
 
পরে আবার নির্বাচনের চারদিন আগে ২৬ ডিসেম্বর গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে কিছুই জানেন না তিনি।
এই অবস্থায় ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি-জামায়াতসহ ঐক্যফ্রন্ট। ভোটের দিন দুপুরে ভোট কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন ভালো হচ্ছে।’
 
তবে ভোটগ্রহণ শেষে দেখা যায় জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিএনপি, ফল হয়েছে অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু তখনও নিশ্চুপ থাকে দলটি।
 
এরপর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে হাঁটে দলটি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কারচুপির অভিযোগ তোলে বিএনপি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে। কিন্তু দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তারা। উল্টো দলের মহাসচিব নির্বাচনে জয়ী হলেও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি।
 
তবে নির্বাচিত বাকি সদস্যরা এবং সংরক্ষিত নারী আসনেও শপথ নেযন তারা। এমনকি মির্জা ফখরুলের ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে সংসদে যান বিএনপির নেতা।
 
এই অবস্থায় বিএনপি ঘোষণা দেয়, ৩০০ আসনের প্রার্থীদের ডেকে নির্বাচনী অনিয়ম শুনবে। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তন ভাড়া করে দুই দফায় ৭৮ জন প্রার্থীর বক্তব্য শুনে দায় সারে দলটি। বাকি ২২২ প্রার্থীর বয়ান শোনা হয়নি। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে ৭২টি মামলা করলেও সেগুলো আর গতি পায়নি।
  

অংশগ্রহণ থাকলেও ভরাডুবির পর ২০১৮ সালের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করে বিএনপি ও তার সহযোগীরা (ফাইল ছবি)

 

আওয়ামী লীগের মতে, ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে চরম সন্ত্রাস করেছে বিএনপি। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও জেতার চেয়ে নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
  

বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন: কানাডার আদালত

 

বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ড যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বিদেশি আদালত অর্থাৎ কানাডার ফেডারেল আদালতেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অটোয়াতে কানাডার ফেডারেল আদালতে (সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন, ২০১৭ এফসি ৯৪) বলেছে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আদালত মনে করে যে, বিএনপি হচ্ছে একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়।
 
কয়েক মাস পর কানাডার আরেকটি ফেডারেল আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করে। আর বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি হরতাল কার্যকর এবং সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দলের ভূমিকার জন্য বিএনপি নেতার কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে। পাশাপাশি তার বিচারিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করার কথা বলেন ফেডারেল কোর্টের বিচারক ফোথারগিল।
  

সামরিক ছত্রছায়ায় জন্ম বিএনপির

১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন। এদিন স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভ্রূণ ধ্বংস করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের যে বীজ রোপিত হয়েছিল, তার ভয়ংকর প্রকাশ ঘটেছিল সেদিন।

 
গভীর রাতে বন্দুক ঠেকিয়ে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।
 
সায়েমকে সরানোর অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচনের ভয়। সায়েম যেকোনো সময় নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, এই ভয় থেকে তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন জিয়া।
 
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) সময় সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল। কেন তিনি এই ভূমিকা রেখেছিলেন, তার কাজের মধ্য দিয়েই তা প্রমাণিত হয়েছে।
 
তিনি বলেন, প্রথমে সায়েমকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন জিয়া। পরে তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও কবজা করেন।
 
গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘বিএনপি সময়-অসময়’ বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। বইটিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন।
  

যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনের সুযোগ দেন জিয়া

 

পঁচাত্তরের নভেম্বরে শুধু শাসকই বদল হয়নি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তিতেও পরিবর্তন আসে। পঁচাত্তরের ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি সায়েমের নামে সামরিক আইনের দ্বিতীয় ফরমানের তৃতীয় সংশোধনী আদেশ জারি করা হয়।
 
রাষ্ট্রপতির আদেশে উপধারাটি বাতিল হওয়ায় দালাল আইনে অভিযুক্ত একাত্তরের পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হয়।
 
নির্বাচন দেয়া হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসবে সেই আশঙ্কা থেকে বিচারপতি সায়েমকে দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা দেন জিয়া। ১৯৭৬ সালের ২১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে সংসদ নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি সায়েম। নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা জারির এক সপ্তাহের মধ্যেই জিয়া প্রেসিডেন্টের ডানা ছেঁটে দেন।
মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘বিএনপি: সময়-অসময়’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন। তখন এটিকে রক্তপাতহীন বিপ্লব বলা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গভবনে এই নাটকের পুনর্মঞ্চায়ন হয়েছে।
 
জিয়া উপলব্ধি করেন, বিচারপতি সায়েম একাধারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকলেও তার জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। রাষ্ট্রপতি সায়েম নির্বাচন দিলে জিয়ার আকাঙ্ক্ষা মাটিতে মিশে যাবে। তখন জিয়াকে সরিয়ে অন্য কাউকে সায়েম সেনাপ্রধান নিয়োগ দিতে পারেন বলেও কথা শোনা যাচ্ছিল।
 
এরপর ২৮ নভেম্বর জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে বঙ্গভবনে যান। রাষ্ট্রপতিকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বলেন জিয়া। কিন্তু তাতে রাজি হননি সায়েম। পরে রাত একটায় রণে ভঙ্গ দিলেন সায়েম। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ হস্তান্তরের কাগজে সই করেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে মধ্যরাতে আরেকটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন জিয়া। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

Advertisement

 
জিয়াউর রহমান যেভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পাশাপাশি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আজও সেই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি দলটি।